দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে নিহত ২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিলে দেশের বেশ কিছু অঞ্চল ফের উত্তাল হয়ে ওঠে গতকাল শুক্রবার। এদিন রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একইসঙ্গে কয়েকটি জেলায় বাধে সংঘর্ষ, চলে ভাঙচুর। এদিন নিহত হয়েছেন দুজন। তাদের একজন পুলিশ সদস্য, অন্যজন শ্রমিক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গতকাল গণমিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী। উত্তরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয় দফায় দফায়।
ছাত্রহত্যার বিচার, গুম-খুন বন্ধসহ ৯দফা বাস্তবায়নে উত্তরায় শিক্ষার্থীরা গণমিছিল করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ বলছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগও।
এদিকে, সাইন্সল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ কলেজসহ আশেপাশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। যোগ দেয় অভিভাবকরাও।
দুই ঘণ্টা সাইন্সল্যবরেটরি মোড় অবরোধ শেষে শিক্ষাথীর্দের মিছিল অবস্থান নেয় শাহবাগে। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগের সড়ক।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দোয়া শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ-মিছিল করেছ ছাত্র-জনতা। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে সমর্থন জানিয়ে যুক্ত হয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও।
এসব আন্দোলনের মধ্যে উত্তরায় গণমিছিলে ধাওয়া চলাকাল ক্ষমতাসীনদের কারও কারও হাতে ধারাল অস্ত্র দেখা গেছে। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে রয়েছে অভিযোগ। সিলেট ও খুলনায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় এক যুবককে অস্ত্র হাতে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন একজন শ্রমিক। খুলনায় পিটুনিতে পুলিশের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, সুমন কুমার ঘরামী নামের পুলিশের একজন কনস্টেবল মারা গেছেন। পুলিশের ২০-২৫ জন সদস্য গুরুতর আহত হন।
জুমার নামাজের পর গণমিছিলে অংশ নিতে হবিগঞ্জে শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মোস্তাক মিয়া (২৪) নামের একজন নিহত হন। মোস্তাকের সঙ্গে কাজ করেন মারুফ হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মোস্তাক এখানে জুতা কিনতে এসেছিলেন। এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মঈন উদ্দীন চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, মোস্তাকের হাতে আঘাত ছিল। সেটা গুলি কি না, পরে জানানো যাবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা হাসপাতালে অন্তত ৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পরে জেলা প্রশাসক মোসা. জিলুফা সুলতানা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ শনিবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেন।