চাঁদপুরে শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত দেড় শতাধিক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান অসহযোগ আন্দোলনে চাঁদপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষ দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। আজ রোববার (৪ আগস্ট) সকার ১০টায় শহরের বাসস্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। ১১টায় ছাত্রলীগের অবস্থান ছিল পাশের ইলিশ চত্বরে।
দুপুর সাড়ে ১২টা ছাত্রলীগকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় এতে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করে।
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে সড়কে, আওয়ামী লীগ অফিসে, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাসার নিচ তলায়, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সড়ক ভবন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওসমান গনি পাটোয়ারীর অফিস, আওয়ামী লীগনেতা আলহাজ ওমর পাটোয়ারী অফিস এবং ৭১ টিভি জেলা প্রতিনিধির ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেয়। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, অভিভাক, সাংবাদিক ও পুলিশসহ অন্তত দেড়শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
এরপর বেলা ১টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা বাসস্ট্যান্ড থেকে আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ড্রোন উড়িয়ে ছাত্রলীগের অবস্থান নিশ্চিত করে ছাত্রলীগের দুপুরের খাবার গ্রহণ অবস্থায় ধাওয়া করে আবারও বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেয়। ওই সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ ও অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আহত হন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দুপুরের পরে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি আল আমিন ভুঁইয়ার ব্যক্তিগত অফিসে প্রবেশ করে ক্যামেরা, কম্পিউটার, আসবাবপত্র ও বাইরে থাকা মোটরবাইক ভাঙচুর করে।
সদর হাসপাতলের রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুসারে সংঘর্ষে আহতরা হলেন পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আশেকে রাসুল জাওয়াদ, পৌর ছাত্রলীগনেতা আরাফাত সানি, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আল হেলাল, যুগ্ম্ আহ্বায়ক সাদ্দাম, শিক্ষার্থী অভিভাবক স্বপন প্রমুখ।
পুলিশের মধ্যে আহতরা হলেন সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম, কনস্টেবল আমেনা বেগম, রুপা, লাভলী, ওবায়েদ উল্লাহ ও মুক্তা।
সাংবাদিকদের মধ্যে আহতরা হলেন এনটিভির শরীফুল ইসলাম, একাত্তর টিভির আল-আমিন, ইনডিপেনডেন্ট টিভির মনিরুজ্জামান বাবলু, দীপ্ত টিভির ইব্রাহীম রনি, ঢাকা টাইমসের মাজহারুল ইসলাম অনিক, দৈনিক ইলশেপাড় পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এস এম সোহেল, সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন নীরব।
এদিকে বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতরা প্রবেশ করে ডিসি অফিস এলাকায় সড়কে, মিশন রোড, নতুন বাজার, কালিবাড়ী, ছায়াবানী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির বাসার নিচতলায় ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহির হোসেন পাটওয়ারীর বাড়ি, যুবলীগের আবু পাটওয়ারীর অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির হোসেন মিজির ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে। তারা মিশন রোড এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এর আগে দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বাহিরের অংশের গ্লাস ও সড়ক ভবনের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোবাইক ও রিকশা চলাচল করেছে। তবে এর সংখ্যাও ছিলে খুব কম। সাধারণের মানুষের মধ্যে ছিলে আতঙ্ক। জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ আদালতের দুটি গেট বন্ধছিল। প্রশাসনের লোকজন কোনো গাড়ি নিয়ে অফিসে আসেনি। শহরের খাবারের দোকান ছাড়া বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিজি বলেন, আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বার বার হামলা করে। এতে আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ কমপেক্ষ ৩০ জন আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আশেকে রাসুল জাওয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল-এমরান খান। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার দপ্তরেও ভাঙচুর চালায়। অন্য কোথায় ভাঙচুর কিংবা আগুন দিয়েছে কি না ওই বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারব না। তবে শহরে থম থমে অবস্থাব বিরাজ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।