চাঁদপুরে নৌপুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ২৪২ জেলে
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চর ভৈরবী থেকে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম। মা ইলিশ রক্ষায় নৌ সীমানায় মাছ ধরায় চলছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৩ অক্টোবর থেকে যা চলবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
এ সময় সরকারিভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে নদী থেকে মৎস্য আহরণ, ইলিশ মাছ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ, মজুদ ও বহন করা।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালেও আদেশ অমান্য করে নদীতে জাল ফেলার চেষ্টা করছে কিছু আসাদু জেলে। নৌপুলিশের হাতে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেকে। চলতি অভিযানের ১৭তম দিন অতিবাহিত হয়েছে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর)। এ পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নৌপুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৪২ জেলেকে। সেইসঙ্গে জব্দ করেছে ৮৫টি নৌকা, ৪৬ লাখ ৮১ হাজার ৬১৫ মিটার জাল ও এক হাজার ৬০৪ কেজি ইলিশ মাছ।
গ্রেপ্তার করা জেলেদের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে ১১৪ জেলেকে। ১৭ জেলেকে দেওয়া হয়েছে নগদ অর্থদণ্ড। তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৭৩ হাজার টাকা। বাকি ১১১ জেলেকে মৎস্য আইনে মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান বাস্তবায়নে নদী জেলে মুক্ত রাখতে নৌপুলিশের একটি থানা ও পাঁচটি ফাঁড়ি কাজ করছে। এরমধ্যে নৌথানার অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২৯ জেলে। অভিযানের জব্দ করা হয়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ মিটার জাল, ৩৯ নৌকা ও ৫২৪ কেজি মাছ। গ্রেপ্তার করা জেলেদের সাজা প্রদানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে সাতটি। মাৎস্য আইনে মামলা করা হয়েছে ১০টি।
মোহনপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৮ জেলেকে। অভিযানের জব্দ করা হয়েছে ৯ লাখ দুই হাজার ৮১৫ মিটার জাল, ১০ নৌকা ও ৩৪৭ কেজি মাছ। গ্রেপ্তার করা জেলেদের সাজা দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে পাঁচটি। মাৎস্য আইনে মামলা করা হয়েছে চারটি। এ থানায় অভিযানে পুলিশের উপর আক্রমণ করে জেলেরা। এতে জেলেদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।
আলুর বাজার নৌপুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ জেলেকে। অভিযানের জব্দ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ১০০ মিটার জাল, চারট নৌকা ও ২৫৪ কেজি মাছ। গ্রেপ্তার করা জেলেদের সাজা দিতে মৎস্য আইনে মামলা করা হয়েছে চারটি।
নীল কমল নৌপুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪ জেলেকে। অভিযানের জব্দ করা হয়েছে নয় লাখ চার হাজার ৫০০ মিটার জাল, ১৫টি নৌকা ও ১৪৫ কেজি মাছ। গ্রেপ্তার করা জেলেদের সাজা দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে তিনটি। মাৎস্য আইনে মামলা করা হয়েছে পাঁচটি।
হরিণাঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জেলেকে। অভিযানের জব্দ করা হয়েছে ছঢ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ মিটার জাল, ১৫টি নৌকা ও ৩৩৪ কেজি মাছ। গ্রেপ্তার করা জেলেদের সাজা দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে চারটি। মাৎস্য আইনে মামলা করা হয়েছে তিনটি।
বেলতলী নৌপুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ জেলেকে। অভিযানের জব্দ করা হয়েছে চার লাখ ৫২ হাজার ৬০ মিটার জাল, দুটি নৌকা। গ্রেপ্তার করা জেলেদের সাজা দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে একটি। মাৎস্য আইনে মামলা করা হয়েছে চারটি।
চাঁদপুর অঞ্চলের নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি। আমরা ইলিশের অভয়াশ্রম পদ্মা-মেঘনা নদীতে যাতে জেলেরা মাছ ধরতে না পারে সেজন্য সজাগ আছি। আমরা দেখছি কিছু অসাধু জেলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞা যত দিন থাকবে তত দিন আমাদের কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকবে।