সাভারে আরেকটি হত্যা মামলায় আসামি শেখ হাসিনাসহ ৪২৫ জন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারে নবী নূর মোড়ল নামের এক মাছ বিক্রেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ৪২৫ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে সাভার মডেল থানায় আটটি মামলা দায়ের করা হলো।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী খুলনার পাইকগাছা থানার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা বেগম। মামলা নং- ৮/৫০০। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারপিট ও গুলিবর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান।
নিহত নবী নূর মোড়ল খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের মৃত করিম মোড়লের ছেলে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, তার তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব শামীম আহমেদ, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল গনিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নবী নূর মোড়ল সাভার পৌরসভার বনপুকুর এলাকায় বাদশা মল্লিকের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সাভারে মাছের ব্যবসা করতেন। গত ২০ জুলাই বিকেলে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে মাছ বিক্রির বকেয়া টাকার তাগাদায় বের হন নবী নূর মোড়ল। পৌরসভার ওয়াপদা রোডের তিন রাস্তার মোড়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান তিনি। এ সময় একটি বুলেট এসে কোমর বরাবর বিদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি ক্লিনিক ও পরবর্তীতে এনাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকাল পৌনে ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন নবী নূর মোড়ল। ওইদিন রাত ৮টার দিকে তার মরদেহ গ্ৰামের বাড়িতে নেওয়া হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহতের স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী লেখাপড়া জানত না, দিন আনি দিন খাই অবস্থা ছিল আমাদের। পরিবার নিয়ে কোনোভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছিলাম। মাছ বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাত। একটা গুলি সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো।’
স্বামীকে হারিয়ে মেয়ে নাজমা খাতুন ও ফাইমা খাতুনকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন আকলিমা বেগম। তিনি জানান, ব্যবসা তেমন বোঝেন না। তবে পেটের তাগিদে বর্তমানে পাইকারি বাজার থেকে মাছ কিনে এনে খুচরা বিক্রি করে তার সংসার চালাতে হচ্ছে।