যেভাবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন আল-জাজিরার সাংবাদিকেরা
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন শুধু দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে আলোচিত। ঠিক এমন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (জাভেদ) বিদেশে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদের খবর প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরা। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়।
সাইফুজ্জামানের সাথে দেখা করার জন্য আল-জাজিজার সাংবাদিকরা কৌশল অবলম্বন করেন। কৌশল হিসেবে আলজাজিরার অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা চীন থেকে ১০ কোটি ডলার যুক্তরাজ্যের বাজারে স্থানান্তর করতে চান। এমন কথা বলে সাইফুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ রিপনের সঙ্গে কথা এগোতে থাকে। তারা ধনী বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে অভিনয় করে সাইফুজ্জামানের সম্পদের গোপন তথ্য বের করেন। লন্ডনের একটি হোটেলে রিপন আল-জাজিরার অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে আলাপচারিতায় তার বিষয়ে বোঝানোর জন্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রসঙ্গ টানেন। তখন রিপন বলেন, ‘আমার ভালো বন্ধু সাইফুজ্জামান। আপনি যেটা আমার কাছে চাচ্ছেন, সেটাই আমি তার (সাইফুজ্জামান) জন্য করেছি।’
তার পরিচয় সম্পর্কে রিপন বলেন, ‘তিনি একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রী। তিনি বুদ্ধিমান। তিনি বড় প্রকল্পে যান না। যখন আপনি বড় প্রকল্পে যান, কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে যায়। বড় টাকা, বড় সংখ্যা সবাইকে সতর্ক করে দেয়। আপনি বুঝতেই পারছেন কী বলছি। তিনি এক কোটি আনেন এবং বলেন, আমি নগদে কিনিনি। ব্যাংক আমাকে টাকা দিয়েছে।’ লন্ডনে অনুসন্ধানের মধ্যেই আল-জাজিরা জানতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি নয়টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। পাঁচটি ম্যানহাটানসহ নিউইয়র্কের প্রধান এলাকায় এবং চারটি নদীর ওপারে নিউ জার্সিতে।
আরও কয়েক দফা সাক্ষাতের পর রিপন স্বীকার করেন, তার সবচেয়ে বড় গ্রাহক সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ থেকে আসছেন। চার বছর আগে তার জন্য সবকিছু ঠিক করেছেন। প্রতিবছর তিনি (সাইফুজ্জামান) তার মাধ্যমে ১০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে দেখা করে আলজাজিরার অনুসন্ধানী দল। তার আগে রিপনের পরামর্শে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরামর্শকদের সঙ্গে দেখা করে। প্রথমেই সাইফুজ্জামানের আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করে অনুসন্ধানী দল। ওই আইনজীবী একটি কোম্পানির মানি লন্ডারিং রিপোর্টিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। যার কাজ হচ্ছে কোম্পানি পরিচালনায় যুক্তরাজ্যের নিয়ম-নীতি মেনে চলাটা নিশ্চিত করা। ২০২১ সাল থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের ১০০টির বেশি ঋণের আইনি কাজগুলো করেছেন তিনি।
এরপর রিপন পরিচয় করিয়ে দেন এশিয়ার বৃহত্তম ব্যাংক ডিবিএসের রাহুল মার্টের সঙ্গে, যিনি ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবস্থাপকদের একজন। রিপন বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে ব্যাংকের গ্রাহক করতে গিয়ে রাহুল কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সিঙ্গাপুরের ব্যাংকটিতে অত্যন্ত কড়াকড়ি থাকায় তার স্ত্রীকে এর গ্রাহক করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ডিবিএস সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কোম্পানিগুলোকে ২০টি ঋণ দিয়েছিল, যা তার সাম্রাজ্যকে অর্থায়নে সহায়তা করেছিল। অবশেষে রিপন অনুসন্ধানী দলকে মার্কেট ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের সিইও পারেশ রাজার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি সাইফুজ্জামানের জন্য শত শত ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার মোট সম্পত্তির এক–চতুর্থাংশ, ৮০টির বেশি যুক্তরাজ্যের শীর্ষ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বার্কলি হোমস থেকে কিনেছেন। বার্কলি হোমসের একটি বিপণন অনুষ্ঠানে আল-জাজিরার একজনকে রিপন বলেন, তার ৩০০-এর বেশি বাড়ি আছে। তিনি দুবাইয়ে এগুলো তার (সাইফুজ্জামান) জন্য কিনেছেন। দুবাইয়ের সূত্র অনুসরণ করে নতুন আরও অনেক সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। দুবাইয়ে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ৫৪টি সম্পদের তালিকাভুক্ত মালিক হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।