রপ্তানির খবরে ইলিশ দাম বাড়ল অন্তত ৪০০ টাকা!
ভারতে যাচ্ছে ইলিশ। যদিও তাতে আয় হচ্ছে বাংলাদেশের। যদিও এই রপ্তানিকে পুঁজি করে মাছের রাজার দাম অন্তত ৪০০ টাকা বেড়েছে বলে দাবি ক্রেতাদের। তারা বলছেন, গত ১০দিন আগে চাঁদপুর মাছঘাটে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। বর্তমানে ভারতে ইলিশ রপ্তানির খবরে একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা। যদিও জেলেদের দাবি, হাত বদলের সঙ্গে বাড়তে থাকে মাছের দাম।
সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট জেলে পাড়ার একাধিক জেলে জানালেন, কীভাবে বিক্রি করেন তাদের ধরে আনা ইলিশ। বাবুল জানান, মাছ ধরা পড়লে আমরা আড়তে এনে বিক্রি করি। আড়তেই ভাল দাম পাওয়া যায়। আড়তদার ওই মাছ পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। তারা পরবর্তীতে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রি করেন। এরই মধ্যে দুই হাত বদলে ইলিশের দাম বাড়ে।
জেলেদের দাবি, দুই হাত বদলেই এক হাজার ৮০০ টাকার ইলিশের দাম হয়ে যায় ২৫০০ হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। আনোয়ার হোসেন বলেন, দাদন থাকলেও আমাদের আড়তেই ইলিশ বিক্রি করতে হয়। আমরা সেখানে সর্বোচ্চ দাম পাই। আর আড়তদাররা মুনাফা করেই বিক্রি করতে হয়। কারণ, তার উপার্জন নির্ভর করে কমিশনের ওপর। এরপরে পাইকার ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতার কাছে ওই ইলিশ বিক্রি করেন।
চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের খুচরা বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, মূলত গত কয়েকবছর ইলিশের সরবরাহ কম। বিশেষ করে গত বছরের তুলনায় ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। দাম বেশি থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে। ফলে দাম কমার সুযোগ থাকে না।
আরেক ব্যবসায়ী নবীর হোসেন বলেন, ঢাকার চাইতে চাঁদপুরে ইলিশের দাম বেশি—এই বিষয়টি অনেক ক্রেতারই অজানা। ক্রেতাদের ধারণা, ঢাকায় ইলিশের যে দাম, তার চাইতে চাঁদপুর ঘাটে আরও কম দাম হবে। কিন্তু চাঁদপুরে যে ইলিশ বিক্রি হয় তা স্থানীয় নদীর। কিন্তু ঢাকার ইলিশে অনেক সময় নদী, সাগর ও সংরক্ষিত ইলিশ মিশ্রিত থাকে। এসব কারণে ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি ইলিশে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারেন।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সস্পাদক হাজী শবে বরাত সরকার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মাছঘাটে এসে অনেক ক্রেতাই মন্তব্য করেন, সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। ঘাটের পাশেই পর্যটন এলাকা। যে কারণে ভ্রমণে আসা লোকজনসহ ইলিশের ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। মূলত ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় এসব ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো যায় না। ফলশ্রুতিতে ইলিশ চড়া দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন বলেন, ক্রেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাছঘাটে আমি নিজেও ক্রেতা সেজে অভিযান পরিচালনা করেছি। ক্রয় মূল্য থেকে এখানকার কয়েকজন ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মূল্যে ইলিশ বিক্রি করায় তাদের জরিমানা এবং পরবর্তীর জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক খুচরা ব্যবসায়ী প্রতিকেজি ইলিশ ৫০ থেকে ১০০টাকার বেশি মুনাফা করতে পারবে না। এর বাহিরে যদি কোনো বিক্রেতা বেশি মুনাফা করেন এবং তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।