হাসিনা যাদের নিজের সম্পদ মনে করতেন, তারাও আন্দোলনে জীবন দিয়েছে : হামিদুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও ফরিদপুর অঞ্চলের পরিচালক এবং সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রামে রথিন বিশ্বাস নামে একজন রাজপথে আন্দোলনে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তিনি ঢাকার একটি অফিসের ছোট চাকরি করতেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সব সময় দাবি করে তারা সংখ্যালঘুদের একচ্ছত্র ভোটাধিকারের মালিক। তাহলে রথীন বিশ্বাস জীবন দিয়ে কি প্রমাণ করেছে? যাদেরকে আপনি নিজের সম্পদ মনে করতেন, সেই সম্প্রদায়ের লোকেরাও রাজপথে আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবন দিল।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোপালগঞ্জের শহীদ হওয়া চারটি পরিবারকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হামিদুর রহমান এসব কথা বলেন।
এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে চারটি গণহত্যা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি পিলখানাতে বাংলাদেশে সবচেয়ে মেধাবী, প্রতিভাবান, চৌকষ ও দক্ষ ৫৭ জন সেনা অফিসারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে আলেম ওলামাদের উপর নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ। সেই বেনজীর আজকে দেশে নেই। তৃতীয় যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, আল্লামা সাঈদীর রায়ের পর। সে সময়ে এক দিনে ১৫৩ জন মানুষকে খুন করা হয়েছে, সেখানে মহিলারাও ছিলেন। রাজপথে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেদিন তারা শহীদ হয়েছেন। পাখি শিকারের মতো নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ জুলাই মাস আরও একটি রক্তাক্ত মাস। জুলাই ও আগস্টের শুরুতে ৩৬ দিনে যেভাবে মানুষ খুন করা হয়েছে, এটা ইতিহাসের বর্বরতম জঘন্য গণহত্যা। ইতিহাসের সবচেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ এ সময় সংঘটিত হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামের সাবেক এমপি আরও বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের বয়ান মানুষের হৃদয়ে স্থান করতে পারেননি। রাস্তা-ঘাট, সেতু অনেক কিছুর বয়ান জাতির সামনে উন্নয়নের রোল মডেল বলে তিনি উপস্থাপন করেছিলেন। আমি সত্য, মিথ্যা, ভালো-মন্দের বিচার বিশ্লেষণ করছি না। ইতিহাস সেটার বিচার বিশ্লেষণ করবে।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে হামিদুর রহমান বলেন, আপনি যদি এতো ভাল কাজই করবেন, তাহলে জনগণ এতো ক্ষুব্ধ ছিল কেন? আপনি যদি এতো বেশি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কাজ করে থাকেন, তাহলে কেন আপনার বিরুদ্ধে দেশের আপামর জনতা জীবন দেওয়ার জন্য রাজপথে নেমেছিল। শুধু তাই নয় এ আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা দীর্ঘ সময় রাজপথে ছিলাম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে। আমাদের পাঁচজন শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলী যাদেরকে ফরমায়েশী রায়, মিথ্যা সাক্ষী ও মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। বিদায় বেলা কোন স্বজনকে কাছ পায়নি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে জেলখানায় আবদ্ধ রাখা হয়েছে। সর্বশেষ তাকে চিকিৎসার নামে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক এম এম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় জামায়াতের ইউনিট সদস্য ও গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট আজমল হুসাইন সরদার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শহীদ জিল্লুরের বাবা মো. হাসান শেখ ও শহীদ রথীন বিশ্বাসের চাচা দিপক বিশ্বাস।
গোপালগঞ্জ জেলার সাতটি শহীদ পরিবারের মধ্যে প্রতিটি পরিবারকে শনিবার শহরের একটি মাদ্রাসায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চারটি পরিবার এবং এর আগে ঢাকায় তিনটি শহীদ পরিবারের হাতে নগদ ২ লাখ টাকা করে সহায়তা প্রদান করে জামায়াতে ইসলামী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোপালগঞ্জ জেলার শহীদরা হলেন সদর উপজেলার কাঠি গ্রামের মো. হাসান শেখের ছেলে রাজধানীর ইমপেরিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী মো. জিল্লুর শেখ (১৮), একই উপজেলার কেকানিয়া গ্রামের হাফেজ কামরুল ইসলামের ছেলে হাফেজ মাওলানা মাঈনুল ইসলাম (২২), মুকসুদপুর উপজেলার বনগ্রামের স্বপন মুন্সীর ছেলে আরাফাত হোসেন (২১), একই উপজেলার খান্দারপার গ্রামের শাহাবুদ্দিন মল্লিকের ছেলে মোজাহিদ মল্লিক (১৭), একই উপজেলার ডিগ্রিকান্দি গ্রামের মাহমুদ মোল্লার ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাবিদ মোল্লা (১৪), একই উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের ফারুখ মোল্লার ছেলে দিনমজুর বাবু মোল্লা (২০), কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রামের দানিয়েল বিশ্বাসের ছেলে চাকরিজীবী রথীন বিশ্বাস।