‘উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা’
উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করা এবং দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতেই নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
আজ শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হানিফ এ অভিযোগ করেন।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘কী করে এ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যায় এ চক্রান্তের ফসল হচ্ছে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা। কারণ তারা জানে, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তাদের কাছে আর কোনো অস্ত্র নেই। তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার ধর্মযাজকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করে ভেবেছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা যাবে, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে। তা না পেরে এখন নতুন কৌশল নিয়েছে।’
বিগত বছরগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামায়াত অত্যাচার-নির্যাতন করেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে উপস্থাপন করতে বিএনপি-জামায়াত সব সময় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’
নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন মাহবুব-উল-আলম হানিফ। পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গত ২৮ অক্টোবর (শুক্রবার) নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামের এক যুবক পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরদিন রোববার উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের কয়েকটি মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়।
ভাঙচুরের ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দুটি মামলা করেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় যান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। চারদিনের মাথায় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নাসিরনগর উপজেলার পশ্চিমপাড়ার দুটি ঘর ও দক্ষিণপাড়ার তিনটি ঘরে আবারো আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে দুটি পাড়ার গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে আটক করা হয়। এই নিয়ে মন্দিরে হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় আটকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪-এ।
এর আগে এ দিন বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ জানায়, ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দলের হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আবুল হাশেমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।