নাসিরনগরের ঘটনায় আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নাসিরনগর উপজেলা সদরে বাড়ির সামনে থেকে আহাদকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আবদুল আহাদ নাসিরনগর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর জানান, নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি, মন্দিরে হামলার ঘটনায় নাসিরনগর থানার পুলিশের সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করে।
ওসি জানান, নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় পৃথক আটটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিরুল হোসেন চকদার রয়েছেন।
গত ২৮ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাস নামের এক যুবকের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা আপত্তিকর ছবি পোস্ট করা হয়। এ নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পরের দিন ২৯ অক্টোবর দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরের দিন ৩০ অক্টোবর উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের একাধিক মন্দির ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনার পর ৪ নভেম্বর উপজেলায় হিন্দুদের পাঁচটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ৫ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেবের গোয়াল ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর ১৬ নভেম্বর তাঁর বাড়ির আঙিনায় রাখা পাটখড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
নাসিরনগরে মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন এবং নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়। সহিংসতার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তাঁরা হলেন নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আবুল হাশেম।
এদিকে গত ২৮ নভেম্বর জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে রসরাজের ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে ধর্ম অবমাননাকর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়নি বলে উল্লেখ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরেনসিক বিভাগ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইনও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এদিকে ওই ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরণবেড় বাজারে আল-আমিন সাইবার পয়েন্ট অ্যান্ড স্টুডিওর মালিক জাহাঙ্গীর আলম আপত্তিকর পোস্ট প্রিন্ট করে এলাকায় প্রচারপত্র আকারে বিতরণ করেন। পুলিশ ধারণা করে, তিনি বা কেউ তাঁর সাইবার ক্যাফে থেকে রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করেছেন। পুলিশ জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে চারদিনের রিমান্ডে নেয়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।