‘মূল হোতা’ আঁখির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান অাতিকুর রহমান আঁখিকে আজ আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফউদ্দিন আহাম্মেদের আদালতে আঁখিকে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে তিনি আঁখিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
আদালত পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান জানান, আজ শুক্রবার বিধায় পরবর্তী কার্যদিবসে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। হামলার ঘটনায় তাঁর প্রেরণা ও অর্থের জোগান ছিল। পুলিশ নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
আদালতে হাজিরের পর চেয়ারম্যান আঁখিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আদালত পরিদর্শক।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে আঁখিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে নাসিরনগর হামলার ‘মূল হোতা’ দাবি করছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে আতিকুর রহমান আঁখি সহায়তা করেন। তাঁর নির্দেশ ও সহায়তায় সেদিনের তাণ্ডব ঘটে। তিনি ১০ থেকে ১৫টি ট্রাকে করে মানুষ হরিপুর থেকে নাসিরনগর সদরে আনেন। ওই সব ট্রাকের লোকজন পরে হামলা চালায়। তিনি ট্রাকভর্তি মানুষ পাঠিয়ে নাসিরনগরের পরিস্থিতি টালমাটাল করে দেন। বিশেষ নেতাদের ইন্ধনে স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হককে কুপোকাত করতেই হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিশেষ নেতাদের অনুকম্পায় আতিকুর রহমান আঁখি এতদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছিলেন। এরপর পুলিশ তদন্ত করে হামলার ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করলে আঁখি গা-ঢাকা দেন। তাঁর অবস্থান জানতে এর আগে ব্যক্তিগত সহকারী ও ইউপি সচিবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
গত ২৮ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাস নামের এক যুবকের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে পোস্ট করা হয়। এ নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে দেয়।
এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পরের দিন ২৯ অক্টোবর দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরের দিন ৩০ অক্টোবর উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের একাধিক মন্দির ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।