সামনে রেখে ভোট, আসছে আরো জোট!
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন দুটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ক্ষমতাসীন জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে বাম দলগুলোর একটি জোট গঠনের চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট গড়তে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণফোরাম ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মিলে একটি জোট হতে পারে। আর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইসলামী ভাবধারার জোটে আপাতত হেফাজতে ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে।
বামধারার দলগুলো মিলে যে জোটের কথা শোনা যাচ্ছে, যে স্বপ্ন নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বাসদ নতুন জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ রকম একটি উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর দল সম্পৃক্ত। তবে এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব জানান, তাঁরা বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে তাঁরা গণমাধ্যমের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন, কারা জোটে থাকছেন এবং নির্বাচন সামনে রেখে তাঁরা কী কী পদক্ষেপ হাতে নেবেন।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনের ভাষ্য, ‘গত এক বছর ধরেই জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকে তাঁদের চিন্তার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন, অনেকে করেননি। এবার দেখা যাক কতটুকু অগ্রসর হয়।’
আবদুল মালেক বলেন, 'রাষ্ট্রনিবন্ধিত সব দলকেই আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এখন দেখি আমাদের এই আহ্বানে কোন কোন দল সাড়া দেয়।'
তবে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জোটে যাওয়া নিয়ে এখনই কোনো ভাবনা নেই।
গণফোরামের সভাপতি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন জানান, কোনো দলই এখনো নতুন জোট গঠনের বিষয়ে তাঁদের বলেননি। স্বাধীনতার মূল শক্তি ও বাহাত্তরের সংবিধানের চেতনা নিয়ে কোনো জোট গঠন হলে তা গণতন্ত্রের পথ সুগম করবে বলে তাঁর বিশ্বাস। তবে নতুন জোটে থাকার বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু বলেননি।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ইসলামী আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখা ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে পৃথক একটি জোটের কথা ভাবছি। এরই মধ্যে আমাদের দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে দুটি ইসলামী ভাবধারার দল যোগাযোগ করছে।’
এরই মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো জাতীয় পার্টিও (জাপা) একটি জোট গড়ার জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। সোমবার রংপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একভাবে নির্বাচন করবে, বিএনপি একভাবে নির্বাচন করবে আর আমি এককভাবে নির্বাচন করব। আমার সঙ্গে যদি কয়েকটি দল আসে তাতে ক্ষতি তো কিছু নেই। ২০ দল, ১৪ দল আছে, আমারও এ রকম একটা জোট হবে। অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমি এখনো কোনো ঘোষণা দিইনি। যাদের যোগ্য মনে করব, তাদেরকে সঙ্গে নেব।’
তবে নতুন জোটের বড় ধরনের কোনো কার্যক্রম করার সক্ষমতা আছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী। তিনি বলেন, ‘ষাটের দশকের তুখোড় বাম রাজনীতিবিদরা এখন বড় দুটি দলের নেতা হয়ে রাজনীতি করছেন। দলীয়ভাবে যাঁরা মোটামুটি সক্ষম, তাঁরাও জোটবদ্ধ। একই কথা সম্ভাব্য অন্য জোটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই আওয়ামী লীগের মতো বড় দল যে সক্ষমতা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্ভাব্য নতুন জোটের সে শক্তি আছে কি? তবে নতুন কিছুকে স্বাগত জানানোই যেতে পারে।’
এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আগে জোট গঠন হোক, পরে কথা বলা যাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনি বলেন, ‘এসব জোটে তুলনামূলকভাবে বড় দল দ্বারা ছোট দল শাসিত হয়। কিন্তু কোনো রেজাল্ট আসে না।’