ভেড়ার ভ্রূণে বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) একটি ভেড়ি দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ভেড়া ও একটি ভেড়িশাবক। ঘটনাটি সাধারণ মনে হলেও আসলে সাধারণ নয়। ওই মা-ভেড়িতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ভ্রূণ।
এটিই বাংলাদেশে প্রথম ঘটনা। আর ভেড়ার ভ্রূণে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য। গতকাল মঙ্গলবার দুটি শাবকের জন্ম দেয় ওই ভেড়ি।
গবাদি পশুর ভ্রূণ সংরক্ষণ ও স্থানান্তরে সফলতা পেয়েছেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের গবেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে ভেড়ার ভ্রূণ উৎপাদন, সংরক্ষণ, স্থানান্তর এবং বাচ্চা প্রসবের সফলতা বাংলাদেশে এটিই প্রথম।
গবেষণাকাজে ১১টি ভেড়িতে ২২টি হিমায়িত ভ্রূণ এবং চারটি গাভীতে আটটি হিমায়িত ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হয়। ১১টি ভেড়ির মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে একটি ভেড়ি দুটি শাবক প্রসব করে। যার মধ্যে একটি ভেড়া ও একটি ভেড়িশাবক। ওই ভেড়িতে দুটিই হিমায়িত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশে মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণ এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই স্বল্পতম সময়ে উচ্চগুণসম্পন্ন অধিক সংখ্যক গবাদি পশুর বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হেকেপ প্রজেক্টের মাধ্যমে ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের গবেষকরা গরু ও ভেড়া নিয়ে কাজ শুরু করেন।
প্রকল্পের এসপিএম অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা জানান, সাধারণ নিয়মে প্রতিটি ভেড়ি বছরে সর্বোচ্চ চারটির মতো বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় একটি ভেড়ি থেকে ‘সুপার ওভুলেশনের’ মাধ্যমে বছরে ২৫ থেকে ৩০টি ভ্রূণ উৎপাদন করা সম্ভব এবং যার মাধ্যমে প্রথমবার প্রজননেই উন্নত জাতের ভেড়ার শাবক উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে করে একজন খামারি অতি অল্পসময়ে গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন করতে পারবেন। একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রজনন কৌশল তৈরির জন্য গবেষক, ব্রিডার ও সমাজ তথা খামারিদের যৌথ প্রয়াস আবশ্যক। তিনি বলেন, ‘সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রাণী প্রজনন সহায়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গবাদি পশুর ভ্রূণ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে আমরা কৃষকের চাহিদা পূরণ এবং গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি।
প্রকল্পের ডিএসপিএম অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারী বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো এখানে গবাদি পশুর ভ্রূণ সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা প্রয়োজনমতো ভ্রূণ সংগ্রহ করে তা প্রতিস্থাপন করে গবাদি পশুর মানসম্মত প্রজনন নিশ্চিত করতে পারবেন।’ এ ছাড়া বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগে স্থায়ী সিমেন ও ভ্রূণ ব্যাংক তৈরি করা হবে বলে জানান।
প্রকল্পের পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার আশা প্রকাশ করে বলেন, উদ্ভাবিত হিমায়িত ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি গবাদি পশুর খামারে প্রয়োগের মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব হবে।