বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের আলামত পাননি চিকিৎসকরা
রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল ওই দুই শিক্ষার্থী ধর্ষিত হয়েছে কি না, পাশাপাশি তাদের বয়স নির্ধারণ করতে বলেছিল। আমরা তাদের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছি। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে আমরা পেয়েছি।’
‘ডিএনএ রিপোর্টে আমরা তাদের (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী) দুজনেরই হাইভেজনাল সফট পাঠিয়েছি। পাশাপাশি তাদের কামিজ পাঠানো হয়েছে। কামিজ ও হাইভেজনাল সফটে ডিএনএর যে নমুনা পাঠানো হয়েছে, তাতে বীর্যের কোনো উপস্থিতি পাইনি।’
মামলার পর দিনই দুই অভিযোগকারীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় এবং এ-সংক্রান্ত যাবতীয় আলামত সংগ্রহ করা হয় বলে ডা. সোহেল মাহমুদ জানান।
ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়েছে। ধর্ষণের পর ৪০ দিন অতিবাহিত হলে সাধারণত কোনো আলামত পাওয়া যায় না।
জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী। মামলার আসামিরা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ। মামলার পর পুলিশ দুই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করান। এরপর আদালতের নির্দেশে দুই ছাত্রীর পোশাক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এর মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ছাড়া বাকি চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, হোটেল রেইনট্রিতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এজাহারে বলা হয়, ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন এবং তিনি প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় দেহরক্ষী পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তাঁরা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা তাঁরা কাটিয়ে ওঠেন এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এতে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।
ডাক্তারি পরীক্ষার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেনন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিনি ছাড়া কমিটির বাকি সদস্যরা হচ্ছেন কবির সোহেল, মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন ও কবিতা সাহা। বোর্ডের অধীনে দুই তরুণীর মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।