এলজিইডির প্রকৌশলীকে আ. লীগ নেতার চড়
বান্দরবান পৌর আওয়ামী লীগের এক সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার দুপুরে এলজিইডির বান্দরবান জেলা কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার নাম রাজু বড়ুয়া। তিনি বান্দরবান বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার সভাপতি ও পেশায় ঠিকাদার।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলজিইডির কর্মীরা জানান, এলজিইডির অর্থায়নে দুই কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নে ৬০ মিটার দীর্ঘ একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার লাইসেন্সে নির্মাণ কাজটি করছেন পৌর শাখা আওয়ামী লীগের নেতা রাজু বড়–য়া। কাজটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।
রাজু বড়–য়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলমান এই কাজের বিপরীতে অতিরিক্ত অর্থ ছাড় দেওয়ার জন্য এলজিইডির রোয়াংছড়ি উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলামকে চাপ দেন। এই বিষয়টি নিয়ে আগেও প্রকৌশলীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতার একাধিকবার বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
বাধ্য হয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম কাজটির তদারকির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদনও করেন। আজ দুপুরে এলজিইডির জেলা অফিসে সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে তর্কে জড়ান রাজু বড়ুয়া। একপর্যায়ে রাজু বড়–য়া প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলামকে চড় মারেন। এমনকি তাঁর শার্টের কলার ধরে টানা-হেঁচড়া করেন। পরে অফিসের লোকজন তাঁদের দুজনকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় রাজু বড়ুয়া অফিসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাত্তা দেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অন্য কাজের বিপরীতে কাজ না করেও অতিরিক্ত অর্থ ছাড় করার অভিযোগও রয়েছে এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম বলেন, কাজটি নিয়ে প্রায়ই নানা রকম হুমকি দেন রাজু বড়ুয়া। বাধ্য হয়ে নির্মাণকাজটির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। আজ সবার সামনে তাঁকে ওই আওয়ামী লীগ নেতার হাতে অপমানিত হতে হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজু বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘তেমন কোনো কিছু হয়নি। কথাকাটাকাটি হয়েছে দুজনের মধ্যে।’ শার্টের কলার চেপে ধরার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন চাকমা বলেন, দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার গায়ে হাত তুলে রাজু বড়–য়া মোটেও ঠিক কাজ করেননি। রাজনৈতিক এবং স্থানীয় ব্যক্তির প্রভাব দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ছাড়ের চেষ্টায় সফল না হওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তিনি।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ঠিকাদার হিসেবে রাজু বড়ুয়াকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। একজন ঠিকাদারের সঙ্গে যতটুকু সম্পর্ক থাকা উচিত, তাঁর সঙ্গেও ততটুকু রয়েছে।
তাঁর সঙ্গে ভালো সম্পর্কের দাপট দেখানের বিষয় জানতে চাইলে মোহন চাকমা বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ফেলা দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’