বেকসুর খালাস পেলেন সাবেক সেই সিভিল সার্জন
ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া লক্ষ্মীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফ আপিলে খালাস পেয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল ৩টার দিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিলের পর বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় দেন।
প্রায় ৩০ মিনিটের শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের সাজার রায় স্থগিত করে আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী রাসেল মাহমুদ মান্না রায়ে চিকিৎসকের খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খালাস পাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে সালাহ উদ্দিন শরিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট।’
গত সোমবার লক্ষ্মীপুর শহরে জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকার কাকলি শিশু অঙ্গনের (বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রবেশপথে আগে-পরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফের বড় ছেলে মিনহাজের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় ডা. সালাহ উদ্দিন এগিয়ে গিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চান। কিন্তু এডিসি পরিচয় না দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে এডিসি পুলিশ দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিনকে আটক করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিনকে ‘অসদাচরণের’ দায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।
খবর পেয়ে জেলায় কর্মরত চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছুটে যান। বিক্ষুব্ধ অবস্থায় চিকিৎসকরা প্রশাসনের সব সেবা কার্যক্রম ও সব হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ রাখার হুমকি দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফের মুক্তি দাবি করেন। জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগমের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি করে সাজা দেওয়ার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক আপিল করলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন চিকিৎসকদের।
এরপর গতকাল ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফের পক্ষ থেকে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তাঁকে জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর শওকত হোসেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
ওই ঘটনায় গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশফাকুর রহমান ও কামাল হোসেন নিয়াজী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত লক্ষ্মীপুরের সাবেক সিভিল সার্জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড-সংক্রান্ত সংবাদ সংযুক্ত করে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন ও হাসান এম এস আজিম।
শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ লক্ষ্মীপুরের সাবেক সিভিল সার্জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তিন মাসের সাজা দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে (ইউএনও) তলব করেন। তাঁদের আগামী ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় স্বশরীরে হাজির থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ সময় সালাহ উদ্দিন শরিফকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
অন্যদিকে সেই এডিসি শেখ মুর্শিদুল ইসলামকে গতকাল ওএসডি করেছে সরকার। এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে পদায়ন করা হয়।