আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/02/05/photo-1423130172.jpg)
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল বুধবার রাতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শিক্ষকরা তাঁদের রক্ষা করতে এলে তাঁদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে দুই শিক্ষকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে উপাচার্যপন্থী কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গতকাল বুধবার বিকেল ৫টা দিকে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ‘অনশন কর্মসূচি’ শুরু করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। রাত সোয়া ১২টার দিকে মুখোশ পরা একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীদের চিৎকারে কয়েকজন শিক্ষক এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপরও হামলা করে। এতে দুই শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র শাজাহান আলী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাজু, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ইমরান হোসেন ও সুজন কুমার পালকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ছাত্র ও শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্যের মদদে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় কাছে পুলিশ থাকলেও তাঁদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (ইনচার্জ) এসআই শফিকুল ইসলাম শফিক হামলার সময় এগিয়ে না আসার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা চালিয়েছে। এ সময় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আইয়ুব আলী সামান্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ এনটিভিকে বলেন, হামলাকারীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপিত সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের শামিয়ানা, ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেছে। এ ঘটনার জন্য উপাচার্য এ কে এম নূর উন নবী দায়ী। তাঁর মদদে এ হামলা চালানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ঢাকায় অবস্থানরত উপাচার্য এ কে এম নূর উন নবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হলেও এনটিভি প্রতিবেদকের ফোন ধরেননি তিনি।
এদিকে, রাতে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ সকাল থেকে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন শুরু করেন। এর মধ্যে উপাচার্য সমর্থক নীল দলের আহ্বায়ক ড. আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রছাত্রী একাডেমিক ভবন-৩-এর সামনে মানববন্ধন করার চেষ্টা করলে উপাচার্যবিরোধীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক সমিতির নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে উপাচার্যবিরোধীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আগামীকাল থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোরশেদুল আলম রনি এনটিভিকে বলেন, হামলার ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত নভেম্বর মাস থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা প্রদান, স্নাতকোত্তর কোর্স চালু, আবাসিক হল, ক্যাফেটেরিয়া ও ল্যাব চালু, স্থায়ী নিয়োগ ও বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, মিছিল-সমাবেশ করে আসছে আন্দোলনকারীরা। এ আন্দোলনের কারণে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২৯ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করে। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।