তারেক রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল : আইনমন্ত্রী
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘ভয়াবহ এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমান। আমরা তাঁর সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি চেয়েছিলাম। মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় তাঁর ফাঁসি হওয়াই উচিত ছিল।’
আজ বুধবার রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এর আগে দুপুরে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের সামনের লাল দালানে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘মোটের ওপর আমরা এ রায়ে খুশি। যেখানে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেখানে এ রায় আমাদের খুশি করেছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই এ মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে। মামলার আলামত নষ্ট করা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান মূলত আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রায়ের কপি পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেব, তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করা হবে কি না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির আসামির মধ্যে আরো রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তখনকার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মাইন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মাইন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী প্রমুখ। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকসহ বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।