খাবারে সাজানো ছিল টেবিলটি, চুলায় ছিল হাঁড়ি
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা। ওয়াহিদ ম্যানশনের দোতলায় প্রবেশ করার পর রান্নাঘর ও ডাইনিং রুমের দিকে নজর যায়। চুলার ওপর এখনো ঠিকঠাক রাখা আছে রান্নার পাতিল ও কড়াই। কিন্তু এসব পাতিল ও কড়াইতে যা আছে, তা এখন আর খাবারের উপযোগী নয়। পুড়ে কয়লা হয়ে আছে সব।
আর নেই তিনি, যিনি পরম মমতায় পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করছিলেন। রান্নাঘরে রাখা হাঁড়ি, পাতিল ও চুলা এখন শুধুই স্মৃতি। পড়ে আছে খাবারের টেবিলটি। নিঃসঙ্গ। আগুনে পুড়ে এটিও এখন অকেজো।
গত বুধবার রাতে লাগা আগুনে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওই বাসভবনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের দুদিন পর ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ওয়াহিদ ম্যানশনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের ভয়াবহতার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। এখানে থাকা প্রায় প্রতিটি জিনিসই পুড়ে কয়লা হয়ে আছে।
দোতলায় রান্নাঘর থেকে খাবারঘরে গেলেই চোখে পড়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা খাবার প্লেট পুড়ে কয়লা হয়ে টেবিলের সঙ্গে মিশে আছে। সাজিয়ে রাখা আছে পানির মগ, গ্লাস, খাবারের পাতিল। টেবিলের চারপাশে সাজিয়ে রাখা আছে পরিবারের মানুষের বসার জন্য চেয়ারগুলো। কিন্তু এখানেও এখন সুনসান নীরবতা। দুদিন আগেও যাঁরা এ টেবিলে বসে খাবার খেয়েছেন, তাঁরা এখন আর এখানে নেই। শুধু পড়ে আছে খাবারের টেবিল। নিঃসঙ্গ, আগুনে পুড়ে এটিও এখন অকেজো।
রান্নাঘর ও খাবার ঘরের শোকেসে সাজানো বিভিন্ন জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারদিকে। আবার কিছু কিছু জিনিস যেখানে রাখা ছিল, সেখানেই আছে। তবে এগুলোও আগুনে পুড়ে প্রায় কয়লা হওয়া।
শুধু রান্না বা খাবারের ঘর নয়; একই অবস্থা ওয়াহিদ ম্যানশনের প্রায় প্রতিটি রুমে। দামি সোফা ও আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে রাখা রুমগুলোও এখন শুধুই স্মৃতি। আগুনের ভয়াবহতা থেকে এসবের কিছুই রেহাই পায়নি। বিভিন্ন ধরনের শোপিস আগুনে পুড়ে রুমের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ছড়িয়ে আছে বাচ্চাদের পুড়ে যাওয়া খেলনাও।