করোনার টিকা নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে প্রকাশের দাবি বিএনপির
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল বলেছেন যে টিকার মূল্য ৪২৬ টাকা পড়বে। এই মূল্যটা কি সরকার দেবে নাকি জনগণকে দিতে হবে-এই বিষয়টা ক্লিয়ার না।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবিলম্বে সরকারের এই বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা পরিকল্পনা অর্থাৎ সব কিছু নিয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ, মূল্য, কতজনকে দেওয়া সম্ভব হবে, কাদের দেওয়া হচ্ছে এর একটা রোডম্যাপ অবশ্যই জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি আমরা জানাচ্ছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শুনতে পারছি যে, উচ্চপর্যায়ের মানুষদের জন্য ইতোমধ্যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। আমরা খবর পেয়েছি যে গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব এই সমস্ত ক্লাবগুলোতে যারা সদস্য আছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আরো শুনতে পারছি যে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যারা আছেন, তাদের জন্য করা হচ্ছে, মন্ত্রীদের জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিভাবে এই টিকা পাবে, কখন পাবে-সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা সরকারের কোনো দপ্তরের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাইনি। আমাদের যেটা বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষ যেন বিনামূল্যে টিকা পায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রথমদিনই বলছেন যে এটা জনগণকে বিনা মূল্যে দেওয়া উচিত।’
করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে কবে পৌঁছাবে তা নিয়ে জনগণকে সরকারের সঠিকভাবে তথ্য দেওয়া উচিত মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট তারা ভ্যাকসিনটা অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে কিনেছে। দে আর পারচেজ অব ফর্মুলা অ্যান্ড দে উইল প্রডিউস ভ্যাকসিন, তারা তৈরি করবে। তারপরে সেটা বেক্সিমকো বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। আমাদের প্রশ্ন হলো- এটা তো পরিষ্কার হতে হবে জনগণের কাছে যে এটা সরকার না কিনে বেক্সিমকো কিনল কেন?’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বেক্সিমকোর কি এখানে কমিশন আছে? কত কমিশন আছে? বেক্সিমকোর কত কমিশন আছে সেটা আমরা জানতে চাই। মূল্য কত দিতে হবে? সিরাম ইনস্টিটিউটকে সরকার টাকা দিচ্ছে। কার মাধ্যমে দিচ্ছে? বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে দিচ্ছে। হোয়াই? সরকার নিজে সিরাম ইনস্টিটিউটকে দিচ্ছে না কেন?’
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জানার অধিকার আছে জনগণের। আপনি প্রশ্ন করেছেন, এখানে অন্য কোনো কিছু আছে কিনা। পরিষ্কার তো। হোয়াই এ প্রাইভেট কোম্পানি ইনসাইড দেয়ার। যদি বুঝতাম যে, বেক্সিমকো আগে টাকা দিয়ে এটা কিনে নিয়েছে, তাহলে বুঝতাম যে, আমাদের সরকারের টাকা নেই। তারা টাকা দিয়েছে বলে তাদের একটা কমিশন দিতে হচ্ছে। তাও তো না। এখানে সরকার ৬০০ কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। আজকে হোক, কালকে হোক দিয়ে দেবে। তাহলে হোয়াই বেক্সিমকো ইনসাইড? এটা কি এজন্যে যে তিনি এই সরকারের উপদেষ্টা নাকি অন্য কোনো কারণ? এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ সেইভাবে অফিসিয়ালি কোনো কিছু অ্যানাউন্স করেননি।’
এদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের বিষয় সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটি সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম এবং বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই কমিটি অবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রদান পর্যন্ত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করবে এবং সেই তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তারা আমাদের জাতির সামনে তাদের বক্তব্য ও পরামর্শ তুলে ধরবে।