‘গুলিবিদ্ধ’ জানিয়ে স্ট্যাটাস, লাইভে এসে নুর বললেন, ‘সুস্থ আছি’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যুব অধিকার পরিষদের ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুমতি না থাকায় মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর পুলিশ ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় ৩৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনার সময় ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানিসহ ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে রফিকুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিক্ষোভ মিছিল ও সংঘর্ষের ঘটনার পর দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘Nurul Haque Nur’ নামের একটি পেজ থেকে ‘ভিপি নুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত’ উল্লেখ করে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। এর ঠিক দুই ঘণ্টা ২৬ মিনিট পর অর্থাৎ বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে একই ফেসবুক পেজ থেকে নুরুল হক নুর লাইভে আসেন।
লাইভে এসে নুরুল হক নুর দাবি করেন, ‘আমি আল্লাহুর রহমতে এখনও পর্যন্ত ভালো আছি। সুস্থ আছি। ধন্যবাদ সবাইকে।’ যদিও লাইভ শেষ হওয়ার পর ‘ভিপি নুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত’ সংক্রান্ত স্ট্যাটাসটি আর সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্ট্যাটাস বা বক্তব্য মুছে ফেলার বিষয়ে জানতে চেয়ে নুরের মুঠোফোনে কল দিলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
দুপুরের দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যুব অধিকার পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ওই মিছিলে যুব, ছাত্র অধিকারসহ কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা অংশ নেন। সেখানে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানিও ছিলেন। মোদিবিরোধী স্লোগান দিতে থাকা লোকজনকে পুলিশ বাধা দিলে একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সে সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। মিছিলকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। গ্রেপ্তার করা হয় ৩৩ জনকে। তারপরই ফেসবুক লাইভে আসেন নুরুল হক নুর।
৩৪ মিনিটের ফেসবুক লাইভে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমার ধারণা, পুলিশ এই মিছিলে গুলি করেনি। গুলি করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগের মধ্যে থাকা মোদির দালাল এবং র-এর এজেন্টরা। আজকে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা মিছিল করছিলাম। সেখানে কেন পুলিশ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই লাঠিচার্জ করল? এবং মতিঝিলে আমরা যখন এসেছি, তারা আতর্কিতভাবে হামলা করল।’
নুর আরও বলেন, ‘সেখান থেকে আমাদের মোট ৩৮ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমরা পুলিশ এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আপনারা এরই মধ্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে আক্রমণ করে পাকিস্তানিদের বর্বরতাকে হার মানিয়েছেন। পাকিস্তানি পেটুয়া বাহিনীর কাতারে আপনাদেরকে নিয়ে গেছেন। কাজেই আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে, আপনারা আমাদের যে সহযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার বা আটক করেছেন, সেসব সহযোদ্ধাকে ছেড়ে দিন।’
নুর আরও বলেন, ‘আগামীকাল ২৬ মার্চ। এই ঐতিহাসিক দিনকে যদি কলঙ্কিত না করতে চান, তাহলে অতিদ্রুত আমার সব সহযোদ্ধাদের মুক্তি দিন। যদি আপনারা মুক্তি না দিন, এই ২৬ মার্চ যেমন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ঠিক তেমনি, কাল থেকেও এদেশের আপামর জনগণ গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলবে। মানুষের ভোটাধিকারের আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
এ সময় নুর আগামীকাল ২৬ মার্চ দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে শাহবাগে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
নুরুল হক নুর আরও বলেন, ‘বেঁচে থাকলে লড়াই-সংগ্রাম চলছে, চলবে। এবং আমি না থাকলেও আমার যারা সহযোদ্ধা আছে, তারা চালিয়ে যাবে। আজকে সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে রাখতে চাই, আমরা আগামীকাল স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই। আমরা বিজয় মিছিল করতে চাই। আমরা বিক্ষোভ মিছিল করতে চাই না। যদি আমাদের সহযোদ্ধাদের মুক্তি না দেওয়া হয়, আগামীকাল ঢাকার রাজপথে প্রতিবাদী যুবকদের প্রতিবাদ মিছিল চলবে। সেই প্রতিবাদকারী মিছিলে এদেশের জনগণ সামিল হবে। আগামীকাল বিকেল ৩টায় সেই মিছিলে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আজকের মতো লাইভ শেষ করছি। আমি আল্লাহুর রহমতে এখনও পর্যন্ত ভালো আছি। সুস্থ আছি। ধন্যবাদ সবাইকে।’
এদিকে মতিঝিলের সংঘর্ষ, আটক বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ সমাবেশ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা মোট ৩৩ জনকে আটক করেছিলাম। তাদের মধ্যে শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩২ জন আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের লোকজন বিক্ষোভ বা সমাবেশ করার আগে ডিএমপি থেকে অনুমতি নেয়নি। ফলে আমরা বাধা দিলাম। বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা করে তারা। এতে পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছেন। চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা ভিপি নুরকে খুঁজছি।’