বীরাঙ্গনা মায়া রানীকে ঘর দিলেন ফরিদপুরের ডিসি
বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহাকে ঘর নির্মাণ করে দিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের শোভারামপুর এলাকার নিঃসন্তান নারী মুক্তিযোদ্ধা মায়া রানী সাহার বাড়িতে গিয়ে তিনি তাকে ঘরটি বুঝে দেন। ঘরের সঙ্গে জেলা প্রশাসক ফুলেল শুভেচ্ছা ও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফলের একটি ঝুড়ি তাঁর হাতে তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা প্রমুখ।
এ সময় ঘর পেয়ে কেঁদে ফেলেন বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহা। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মায়া রানী সাহা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এমন ভালো মানুষ আর হয় না। তার কারণে আমার একটি ঘর ও আমার নাম তালিকায় উঠেছে। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। সামনের দিনে আর হয়তো এই কাজ করতে হবে না। জীবনের শেষ বয়সে এই স্বীকৃতি আমাকে অনেক বেশি শক্তি জোগাবে বাঁচার।’
সদর উপজলোর নির্বাহী কর্মর্কতা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজা জানান, ফরিদপুরে মোট পাঁচজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। এদের প্রত্যেককে একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। তারই অংশ হিসেবে আমাদের রাজস্ব বাজেট থেকে মায়া রানীর থাকার জায়গা না থাকায় একটু আগেভাগেই তাঁর ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হলো জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে।’
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘অসহায় নারী মুক্তিযোদ্ধা মায়া রানী সাহার ঘর নেই। এই খবর পাওয়ার পর উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে একটি ঘর করে দিতে পেরেছি। তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি আমাদের বীরাঙ্গনা। আমরা এই ঘর দিয়ে শুরু করলাম। ভবিষ্যতে তার জন্য আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।’
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুরের শোভারামপুরে নিজ বাড়িতে ১৬ বছর বয়সে হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় দোসরদের দ্বারা কয়েকবার নির্যাতিত হন নারী মুক্তিযোদ্ধা মায়া রানী সাহা। তবে তাঁর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না থাকা ও ঘরের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছিল। বিষয়টি ফরিদপুরে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানার পর তাঁর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেন। একইসঙ্গে তাঁর থাকার জায়গা না থাকায় একটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।’
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে একটি প্রতিবেদন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাঁকে স্বীকৃতিস্বরূপ নারী মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) গেজেটভুক্ত করে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব রবীন্দ্রনাথ দত্ত স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাঁর নাম যুক্ত করা হয়।
স্বীকৃতির পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহাকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক তাঁর কার্যালয়ে গত ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর সম্মাননা জানান।