ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ, অভ্যন্তরীণ-দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ
বরিশালের নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাস টার্মিনালে এলোপাতাড়ি বাস ফেলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারীরা। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলার ঘটনার পর আনসার সদস্যদের গুলি এবং পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সড়ক অবরোধ এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সংঘর্ষের সময় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও আঘাত পান বলে দাবি করেছেন। এ ছাড়া পাঁচ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন পুলিশ ও দুই আনসার সদস্য রয়েছেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এরপরই নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাস টার্মিনালে এলোপাতাড়ি বাস ফেলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন মেয়রের অনুসারীরা। এর ফলে বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলাসহ পায়রা বন্দর এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া, মেয়রের অনুসারীরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছেন। বরিশাল থেকে বের হওয়া ও ঢোকার সব পথ অবরোধ করায় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বরিশাল। গন্তব্যে যেতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনওর কার্যালয় কম্পাউন্ডে গতকাল বুধবার রাতে ব্যানার খুলতে যান নগর ভবনের কর্মচারীরা। এ সময় বাসভবন থেকে বের হয়ে ব্যানার খোলার কারণ জানতে চাওয়ায় শুরুতে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা কাটাকাটি হয়।’
উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনওর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য জানান, কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ব্যানার খোলার কথা বলে কম্পাউন্ডে আসা ২৫ থেকে ৩০ জন ইউএনওর বাসভবনে ঢুকে তাঁকে ঘিরে ফেলেন। এ সময় ইউএনওকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তাঁদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে হামলা চালানো হলে আনসার সদস্যেরা গুলি ছোড়েন। এতে দুই থেকে তিন জন গুলিবিদ্ধ হন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগর পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করার খবর শুনে কয়েকশ নেতাকর্মীও জড়ো হন সেখানে। তাঁদের নিয়ে মেয়র উপজেলা কমপ্লেক্সে ঢুকতে গেলে দ্বিতীয় দফায় ভেতর থেকে গুলি ছোড়েন আনসার সদস্যেরা। গুলির মুখে ভেতরে ঢুকতে না পেরে কমপ্লেক্সের বাইরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন মেয়র সাদিক। দ্বিতীয় দফায় গুলিবর্ষণেও দুই থেকে তিন জন গুলিবিদ্ধ হন। ছাত্রলীগ কর্মীরা এ সময় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধসহ একটি বাস ভাঙচুর করেন। পরে মেয়র ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
উপজেলা কমপ্লেক্সে এসব ঘটনার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বাস ভাঙচুরসহ সড়ক অবরোধ ঠেকাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সেখানে থাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এতে পুলিশসহ আহত হন অন্তত ৩০ জন। এক পর্যায়ে পিছু হটেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। এর মধ্যেই নগর ভবনের বেশ কয়েকটি ময়লা ফেলার গাড়ি এনে এলোপাতাড়ি ফেলে রেখে অবরোধ করা হয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। এ সময় মহাসড়কে ফেলা হয় বর্জ্য। ফলে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। পরে দিবাগত রাত ৩টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে আবারও যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
গুলিবিদ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তানভীরকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আট থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে করে ১৫ থেকে ২০ জন আমার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে ঢুকে ঘোরাফেরা করছিল। এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জোর করে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রাজীব নামের এক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি নিজেই তাঁর পরিচয় দিয়েছেন। পরে আনসার সদস্যেরা তাদের বের করে দেন। এরপরই ৬০ থেকে ৭০ জন যুবক হঠাৎ করে আমার বাসার ভেতরে ঢোকার পর দোতলায় উঠে আসেন। আমি কারণ জানতে চাইলে তাঁদের একজন নিজেকে মাহমুদ হাসান বাবু এবং আরেকজন সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলে পরিচয় দেন এবং দুজনেই আওয়ামী লীগ নেতা বলে জানান। তাঁরা আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আনসার সদস্যেরা আমার প্রাণ বাঁচান। এরপর কয়েকশ লোক এসে কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। তারা গেট ভেঙে ফেলাসহ অনেক ক্ষতিসাধন করেছে।’
পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিসিসির কর্মীরা সেখানে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁদের ওপর ন্যাক্কারজনকভাবে গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনা সর্ম্পকে জানতে সেখানে গেলে আমার ওপরও গুলি চালানো হয়। আমার বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই, বিচার চাই। এভাবে তো দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।’