তিন কলেজছাত্রী নিখোঁজের ঘটনায় ‘প্রেমিক’সহ গ্রেপ্তার চার
রাজধানীর পল্লবীতে তিন কলেজছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার করা চার জন নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিক। তবে, কলেজছাত্রীদের অপহরণের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা চার জনের যোগসাজস ছিল কি না, তা যাচাইয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীর হয়ে এক শিক্ষার্থীর বোন কাজী রওশন দিল আফরোজ নামের এক আইনজীবী এ ঘটনায় গত শুক্রবার পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন। গত শুক্রবার করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার একই সময়ে তাঁর বোনসহ তিন জন নিখোঁজ হয়। তাঁর বোন বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মুঠোফোন নিয়ে গেছে। আরেক জন আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার এবং অপর জন ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
আজ রোববার দুপুরের দিকে এসব ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ কামাল এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান।
শাহ কামালের দাবি, তিন পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ কিছু তথ্য পেয়েছে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে। যথাযথ তদন্তের জন্য তাঁদের চার জনকে আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সজীব খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীকে এখনও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তবে, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা নিখোঁজ কিশোরীদের খুব কাছের বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিক। গ্রেপ্তার করা ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর একই বয়সী নিখোঁজ কিশোরীর প্রেমিক। এ ছাড়া নিখোঁজ আরেক কিশোরীর প্রেমিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিখোঁজদের বন্ধু-বান্ধবীকে।’
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার চার জন হলেন—রকিবুল (২০), তরিকুল্লা (১৯), অয়ন(১৮) ও জিনিয়া (১৮)।
এসআই সজীব খান বলেন, ‘তিন কিশোরীর খোঁজ পেতে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গ্রেপ্তার হওয়া চার জনকে আজ রোববার আদালতে পাঠিয়ে সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
মামলার বাদি কাজী রওশন দিল আফরোজের কাছে জানতে চাওয়া হয় ঘটনাটি কখন ঘটে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে। আমার বোন সাধারণত এত সকালে ঘুম থেকে ওঠে না। কিন্তু, সেদিন উঠেছিল। এবং আমাদের বাসার নিচে সেদিন সকাল থেকে কয়েক জন নারীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। আমার ধারণা, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা বড় কোনো গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িত, যারা আমার বোনসহ তার দুই বান্ধবীকে প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করেছে।’
কাজী রওশন দিল আফরোজ আরও বলেন, ‘আমার বোনের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া একটি ছেলে প্রায়ই দেখা করত। তাদের যে বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেও আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসত। ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া বান্ধবী এবং আমার বোনের বন্ধু নিখোঁজ ছিল। তারপর তাদের পাওয়া গেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলেছি, ওদেরকে বুঝিয়েছি। কিন্তু, ওরা এত স্মার্টলি মিথ্যা কথা বলতে পারে, আমি বোধ হয় এমন ছেলে-মেয়ে কখনও দেখিনি। এবং ওরা এত বেশি চালাক যে, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাদের মুঠোফোন ও কম্পিউটারে কোনো তথ্য পায়নি। সব ডিলিট করে ফেলেছে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা বলছে, তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। অথচ, তারা সব জানে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হ্যাকার। আইডি হ্যাক করে টাকাও আয় করে সে।’
এ ঘটনায় পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে মাঠে নামলেও এখনও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন কাজী রওশন দিল আফরোজ। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কী না কী ঘটে যায়, আল্লাহ জানেন।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, তিন বান্ধবীই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা মিরপুর–১৪ এলাকায় বসবাস করে। ওই এলাকারই তিন ব্যক্তি বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তিন জনকে অপহরণ করেছে।