বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতারা পেলেন নৌকার টিকিট
আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বিরতি দিয়ে চলে এ মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া। দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নাম পাঠাতে বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
তবে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে।
লিখিত এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী, রাজাকারের সন্তান-নাতি, ইয়াবা ব্যবসায়ী, হত্যা মামলার আসামিসহ বিতর্কিত বিত্তশালীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। রয়েছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। এতে বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্য নিবেদিত ও ত্যাগী নেতারা।
বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা পেয়েছেন নৌকা
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সহসভাপতি মো. মনিরুল আলম সেন্টু পেয়েছেন কুতুবপুর ইউপিতে নৌকার টিকিট।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনিরুল আলম সেন্টু বিএনপির তৃণমূল থেকে ওঠে আসা একজন কর্মী। তিনি এক সময় ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। এরপর ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি ও জেলা কমিটির সদস্য হন। সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তিন বছর আগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সাত-আটটি নাশকতার মামলার কথাও জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বিএনপি থেকে বহিষ্কারের পর সেন্টু আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এবার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, মনিরুল আলম আওয়ামী লীগের কেউ নন। তিনি তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলের লোক। তাঁর নাম কীভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়?
মনোনয়ন প্রস্তাবে এ কারণে তিনি সই করেননি উল্লেখ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত এককভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সই করলেও তিনি আপত্তি জানিয়ে সই করেননি। তাঁর সাক্ষর ছাড়াই মনিরুলের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
এ বিষয়ে মো. মনিরুল আলম সেন্টু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেখানে আমার পদ-পদবি ছিল। তবে তিন বছর আগে আমি বিএনপি থেকে বহিষ্কার হই। শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসি।’
বিএনপি থেকে কেনো বহিষ্কার হয়েছেন বা আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেন্টু বলেন, ‘সে এক বড় ইতিহাস। এখন মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব এ বিষয়ে।’
সাবেক ছাত্রদল নেতা এখন নৌকার মাঝি
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মো. আশরাফুল হক এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অবিলম্বে বাঁশগাড়ী ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
আশরাফুল হক বর্তমানে বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান। এর আগে তাঁর বাবা ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. সিরাজুল হক ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। সিরাজুল হকের মৃত্যুর পর আশরাফুল চেয়ারম্যান হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আশরাফুল হক ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বাবাও এক সময় বিএনপি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের মামলা-মোকদ্দমা থেকে রেহাই পেতে আশরাফুল হক দলটিতে যোগ দেন।
বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মিয়া বলেন, গত ৫ অক্টোবর লিখিতভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর আবেদন করা হয়েছিল যেন আশরাফুল হককে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া না হয়। সেখানে তার দলীয় পরিচয়ের সঙ্গে প্রমাণপত্রও দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আশরাফুল হকের বক্তব্য জানতে তাঁর একাধিক ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
‘বিএনপির হাতে নৌকা কেন’ স্লোগানে বিক্ষোভ
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. কাজী আলমগীর ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আব্দুল মান্নান যৌথ স্বাক্ষরে ৯ অক্টোবর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে একটি চিঠি জমা দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মো. আসাদুল ইসলাম আসাদ পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন মরিচবুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার আপন বড় ভাই মো. রফিকুল ইসলাম মুন্সি মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া আসাদের আপন মামা শ্বশুর মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। আসাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাই বিএনপির মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় অনিশ্চিত।
কিন্তু ৯ অক্টোবর রাতেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষিত দল মনোনীত একক প্রার্থীর তালিকায় ছিল মো. আসাদুল ইসলাম আসাদের নাম। এতে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা হতাশ। এরপর গতকাল রোববার সকালে ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ‘বিএনপির হাতে নৌকা কেন’ স্লোগান দিতে থাকে।
তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে মনোনয়ন!
নাটোরে এনটিভির স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হালিম খান জানিয়েছেন, তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউপি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেওয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গত শনিবার দুপুরে চান্দাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাজারের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। পরে চান্দাই মোড়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সভা করে নেতাকর্মীরা।
এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহনাজ বেগমের সঙ্গে নামের মিল থাকায় ওইসব পদ-পদবি ও স্বামীর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ব্যবহার করে দলীয় মনোনয়ন পান শাহনাজ পারভীন। অবিলম্বে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের দাবি জানানো হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অনিয়ম করে যারা প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বা পাঠাবে, তাদের বিরুদ্ধে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রমাণ পাওয়া মাত্রই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এবং এবারও যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাঁদের ভবিষ্যতে কোনো পদ-পদবি ও মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’