চলুন যাই সাগরকন্যা ও রাখাইন পল্লীতে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। সাগর জলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের সুযোগ রয়েছে এখানে। দেখা যাবে সুউচ্চ ঢেউ আর সৈকত জুড়ে সাদা ঝিনুকের ছড়াছড়ি। উন্মুক্ত প্রাণ-প্রকৃতি, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্যও যেন মুগ্ধকর। সব মিলিয়ে নৈসর্গিক কুয়াকাটা যেন সৌন্দর্যের এক অনন্য উদাহরণ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত, যেখানে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। সৈকত জুড়ে ঢেউয়ের সঙ্গে আসা সাদা ঝিনুকের দৃশ্যও মুগ্ধকর। সৈকত ঘেঁষে রয়েছে সারি সারি ঝাউ ও নারিকেল গাছের সমারোহ। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে শুয়ে শুয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে সারিবদ্ধ কাঠের শয্যা। রোদ থেকে রক্ষা পেতে শয্যার ওপর রয়েছে নানা রঙের ছাতা। রয়েছে ভাড়ায় চালিত স্পিডবোট, মোটরসাইকেল, ভ্যান ও ঘোড়া। আর ছবি তোলার জন্য রয়েছে অসংখ্য বিচ ফটোগ্রাফার। উন্মুক্ত জলসীমার মনোমুগ্ধকর এই লীলাভূমি দেখতে প্রতিদিনই কুয়াকাটা ছুটে যান দেশ-বিদেশি পর্যটকেরা।
কুয়াকাটায় রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসতি। এর মধ্যে সবচেয়ে ঘন বসতি মিস্ত্রিপাড়া ও আমখোলা পাড়ায়। আমখোলা পাড়ায় রয়েছে শতাধিক রাখাইন পরিবার। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানে বৌদ্ধমূর্তির সংখ্যা প্রায় ১৭টি। রাখাইনদের আর একটি বড় বসতি মিস্ত্রিপাড়া। উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তিটি এই মিস্ত্রিপাড়ায় অবস্থিত। এ মূর্তিটির উচ্চতা ৩৫ ফুট। মিস্ত্রিপাড়া মন্দিরের সামনে রয়েছে সিমেন্টের তৈরি দুটি বাঘ। যা দেখে মনে হবে, জীবন্ত দুইটি বাঘ এ মন্দিরকে পাহাড়া দিচ্ছে। রাখাইন নারীদের পিঠা তৈরি, তাঁত বুননসহ তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে-দেখতে দর্শনার্থীরা সময় পেলেই ছুটে যায় এসব পাড়ায়।
সৈকতের বেড়িবাধেঁর পাশে অবস্থিত শত বছরের পুরোনো সীমা বৌদ্ধমন্দির। চীনের স্থাপত্য সৌন্দর্য অনুকরণ করে নির্মিত এ মন্দিরটি। মন্দিরের ভেতরে স্থাপিত হয়েছে সাড়ে ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধমূর্তি। মূর্তিটি প্রায় সাড়ে তিন ফুঁট উচুঁ বেদির ওপর বসানো হয়েছে। এই মন্দিরের বাইরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীর কূপগুলোর একটি।
কুয়াকাটায় পর্যটক ও রাখাইনদের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতিকে ঘিড়ে। তাইতো সবার কামনা প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গেই সুন্দর ও সুস্থ্য থাকুক কুয়াকাটার পরিবেশ। ভালো থাকুক রাখাইন সম্প্রদায় ও কুয়াকাটার আাদি ইতিহাস। সুষ্ঠুভাবে সযত্নে থাকুক রাখাইন সংস্কৃতি ও পর্যটকদের আগমন।
করোনাসৃষ্ট মহামারির কারণে দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ ছিল দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বন্ধ ছিল কুয়াকাটায় দর্শনার্থী যাতায়াত। সরকারি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রের মতো খুলে দেওয়া হয়েছে কুয়াকাটাও। দর্শনার্থীরা পুনরায় আসছেন এখানে। এখানকার পরিবেশের সজিবতা ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করছে। তাই আপনিও ঘুরে যেতে পারেন নতুন রূপে সেজে ওঠা কুয়াকাটা থেকে।
যাতায়াত
ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একাধিক বাস ছাড়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকা। যারা নৌপথে ভ্রমণ করতে চান, তাঁরা বরগুনার আমতলী রুটের লঞ্চে যেতে পারবেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে যাওয়া এসব লঞ্চ আমতলী পৌঁছাবে সকাল ৭টার দিকে। ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার ২০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা। ডেকের ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। আমতলী থেকে স্থানীয় যানবাহনে যেতে হবে কুয়াকাটা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে খরচ হবে আরও ১০০ টাকা।
থাকা-খাওয়া
কুয়াকাটায় থাকার অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় কামরা পাবেন। আর খাওয়ার জন্য এখানে মিলবে নানা জাতের মাছ। এর মধ্যে ইলিশ, পোমা, রূপচাদা, চিংড়ি, ট্যাংরা, টুনা, কোরালসহ নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ পাবেন রেস্তোরাঁগুলোতে। এ ছাড়াও শুঁটকি রান্না ও মাছ ভর্তা তো রয়েছেই। সন্ধ্যার পর থেকেই সৈকতে মিলবে কাকড়া ফ্রাই ও মাছের বারবিকিউ।