অভিমত
নামধারী শিক্ষকদের অমানবিক আচরণ
প্রত্যেক মানুষের ভেতরে একটা হিংস্র পশু বাস করে। কেউ ওই পশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কেউ কেউ র্ব্যথ হয়। যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাও কখনো কখনো পরাস্থ হয়। না হয় মানুষ এতো অবিবেচক কিংবা র্নিমম হতে পারতো না। দিন দিন আমরা যেসব নতুন নতুন ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি তা দেখে এভাবে চিন্তা করা অযৌক্তিক কিছু নয়। আর যাই হোক; অন্তত মানুষ গড়ার কারিগর কিছু শিক্ষকের কীর্তিকাণ্ড এমন হতো না। সমাজ ও দেশের সর্বশেণির মানুষ শিক্ষকদের মনের গভীর থেকে সম্মান করে। এ শ্রদ্ধা হৃদয়ে লালন করে সবসময়। শিক্ষকদের সাথে অন্য কোনো পেশার তুলনাও কেউ কখনো করে না। তাই একজন শিক্ষকের আচার-আচরণ তথা সার্বিক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মতো নয়। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থী, সমাজ ও দেশ শিখবে। অথচ মাঝে মাঝে কয়েকজন নামসর্বস্ব শিক্ষকের এমন আচরণ দেখা যায় যা কেবল অমানবিকই নয়, নির্মমও। সম্প্রতি কক্সবাজারে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অভিভাবককে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা তেমনি একটি ঘটনা। এমন আচরণ কেবল শিক্ষক সমাজের জন্যেই লজ্জাজনক নয়, জাতির জন্যেও লজ্জাজনক। শিক্ষকদের মধ্যযুগীয় আচরণের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। নামসর্বস্ব এ শিক্ষকদের জন্যে কি শিক্ষক সমাজের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে না?
জানা যায়, আয়াত উল্লাহর ছেলে স্থানীয় করুলিয়া কেজি এন্ড প্রি ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বছরের চুড়ান্ত পরীক্ষায় তার ছেলে কাঙ্খিক্ষত ফল করেনি। বিষয়টি সর্ম্পকে প্রধান শিক্ষক বোরাহান উদ্দিনের কাছে তিনি জানতে চান। কোথাও কোনো সমস্যা হলো কী না। এছাড়া র্পূবঘোষণা ব্যাতিত ভর্তি ও মাসিক ফি বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চান আয়াত উল্লাহ। তারপর যা হলো পাঠকমহল নিশ্চয় বিষয়টি ওয়াকিবহাল আছেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আয়াত উল্লাহকে বেঁধে নির্যাতন করেন ওই প্রধান শিক্ষকসহ, পার্শ্ববর্তী স্কুলের আরেক প্রধান শিক্ষক ! অনেকে অনেক কথা বলছেন। পূর্বের কোনো ঘটনার জের ধরে হলেও এমন ঘটনা অবশ্যই বেদনাদায়ক ও অপ্রত্যাশিত।
অন্যদিকে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের বক্তব্য মতে, আয়াত উল্লাহ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বেয়াদবি করেছে তাই এ শাস্তি দেয়া হয়েছে। যদিও হাত-পা বাঁধার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। একজন অভিভাবক এ বয়সে কেমন বেয়াদবি করেছে? তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিলো। যদিও অপর শিক্ষক বোরহান উদ্দীন নিজেকে আড়াল করে দাবি করেন; ভর্তি ফি মাসিক বিতেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক করা হয়। বিষয়টি জানার জন্যে কমিটির কাছে যেতে বলা হয়। এসময় বাকবিতণ্ডা হয়। ভর্তি ফি আর মাসিক বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়? আর এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির পর্যায়ে যাবে কেন? শিক্ষক একজন অভিভাবক বোঝাতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তা র্নিদ্বিধায় বলা যায়। তাহলে প্রশ্ন জাগে, ঠিক এ শিক্ষকই অবুঝ শিক্ষার্থীদের বোঝাবেন কী করে? পড়াবেন কী করে?
হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের বিষয়ে এখনো শিক্ষকরা কিছু না বলে এড়িয়ে গেছেন। ধরে নিলাম হাত পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি শিক্ষকরা করেনি। করেছে উৎসুক বহিরাগত কিংবা ম্যানেজিং কমিটির লোকজন। তথাপিও স্কুল সীমানার ভেতরে একজন অভিভাবক মার খাবে শিক্ষকরা এ দায় এড়াবেন কী করে? ভিডিও দেখে খুব বেশি পাশবিক মনে না হলেও বিষয়টি নিশ্চয়ই লজ্জার। এ লজ্জা, বিবেকহীনতা কিংবা মূর্খতার দায় কার?
আয়াত উল্লাহ তার ছেলের কাছে কি করে মুখ দেখাবেন? সে কতটা ছোট হয়েছে ছেলের কাছে; সমাজের কাছে একবারও ভেবেছেন? চলমান সময়ে অভিভাবকরা অনেক কিছুই মেনে নেন। তাদের একটাই ইচ্ছে, শুধু তাদের সন্তান যেন মানুষ হয়। হয়তো কোনো কোনো অভিভাবক জুলুম কিংবা অন্যায় মেনে নিতে পারেন না। তাই প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এর খেসারত এত ভয়ংকর হবে ভাবা যায় না! কিছু শিক্ষক যে এতটা অমানবিক হবেন তা নিশ্চয়ই আয়াত উল্লার ছেলেসহ আমরা কেউই কল্পনাতেও ভাবিনি। মুঠোফোনে ধারণকৃত ভিডিওতে বাবার করুণ দৃশ্য দেখে সন্তান কী ধারণা নিয়ে বড় হবে?
আয়াত উল্লাহ এ বিষয়ে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমরা আশা করি, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে অন্তত প্রকৃত ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে—এমন প্রত্যাশা আমাদের। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সময় এটাও খেয়াল রাখতে হবে, কোনো অমানুষ যাতে শিক্ষকতা পেশায় আশ্রয় নিতে না পারে।
লেখক:কাদের পলাশ, গল্পকার।

কাদের পলাশ