সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিহত
সৌদি আরবের জেদ্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় জেদ্দার হাইয়াল সামির এলাকায় তাদের বহনকারী গাড়ি অপর একটি বড় লরিকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান গাড়িতে থাকা তিন বাংলাদেশি।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আউলাতৈল গ্রামের ফোরকান আলীর ছেলে আল-আমিন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কামাল উদ্দিনের ছেলে শাকিল মিয়া ও নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার উত্তর কাচিকাটা গ্রামের কামাল মিয়ার ছেলে কাওছার মিয়া।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সৌদি রেড ক্রিসেন্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিভিল ডিফেন্সের জরুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে জেদ্দা বাদশাহ আবদুল আজিজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নিহত তিনজনই জেদ্দায় ইয়ামামা কোম্পানিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মরদেহ বাদশাহ আবদুল আজিজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের আইন সহকারী হাসিব হোসেন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত শাকিল মিয়ার চাচাতো ভাই রাসেল জানান, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে তাঁরা কাজে গিয়ে বুধবার দুপুর ১২টার সময় কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার মুহূর্তে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুই ভাই ও এক বোনের পরিবারে শাকিল ছিলেন সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন শাকিল।
রাসেল মিয়া আরো জানান, শাকিল কিছুদিন আগে ছুটি শেষ করে সৌদি আরবে এসেছেন। আসার আগে ব্যাংক থেকে ঋণ করে বসতঘর তৈরি করেছিলেন। এরই মধ্যে চিরমুক্তি নিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন শাকিল।
নিহত কাওছারের মামা আজহার জানান, পিতৃহীন কাওছার বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তিন বছর আগে তাঁর বাবাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। কাওছার ছিল পরিবারের একমাত্র সম্বল। এখন তাঁর বিধবা মাকে দেখাশোনা করার আর কেউ রইল না। নিহতের মায়ের বাংলাদেশ সরকারের কাছে একমাত্র দাবি, ছেলের লাশটি যেন দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
নিহত আল-আমিনের স্ত্রী বিলকিস বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁদের বিয়ের পাঁচ বছর হলেও কোনো সন্তান নেই। আল-আমিন তাঁদের পরিবারের একমাত্র সম্বল। নিহত আল-আমিন ছিল পরিবারের সবার বড়। তাঁর একটি ছোট বোন রয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে বিলকিস বেগমের পরিবারের চলছে শোকের মাতম।
বিলকিস বেগম আরো বলেন, ‘আমার স্বামীকে আর পাব না; কিন্তু আমার মৃত স্বামীর লাশটি যেন দেখতে পারি। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আমার স্বামীর লাশটি আমাদের কাছে পাঠান। শেষবারের মতো যেন তাঁকে দেখতে পারি।’
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া শেষে যতদ্রুত সম্ভব মরদেহ দেশে পাঠানো হবে ইনশাআল্লাহ।