‘অস্থায়ী কাজের নিবন্ধন’ পাচ্ছেন মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকরা
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী কাজের নিবন্ধন ‘ই-কার্ড’ কর্মসূচি চালু করেছে দেশটির সরকার। বাংলাদেশসহ মোট ১৫টি দেশের অবৈধ শ্রমিকরা এই ‘ই-কার্ড’-এর সুবিধা পাবেন। ‘ই-কার্ড’ নিবন্ধন চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।
ই-কার্ডের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক নিবন্ধিত হবেন। মোট পাঁচটি সেক্টরের জন্য ই-কার্ডের অনুমোদন দেওয়া হবে।
তবে তিন শ্রেণির লোকদের এ ‘ই-কার্ড’ সুবিধা দেওয়া হবে না। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অবৈধ শ্রমিকদের জন্য এটাই শেষ সুযোগ।
মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মো. শহীদুল ইসলাম মতবিনিময় করেন। ওই দিন বিকেলে বাংলাদেশ দূতাবাসে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় শহীদুল ইসলাম বলেন, যেসব বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অবৈধদের জন্য অস্থায়ী কাজের নিবন্ধন ‘ই-কার্ড’ প্রাপ্ত হবেন, তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৈধকরণে বিশেষ প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর শ্রম মো. সায়েদুল ইসলাম, পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মশিউর রহমান তালুকদার, শ্রম শাখার প্রথম সচিব হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল, দ্বিতীয় সচিব তাহমিনা বেগম ও শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব মো. ফরিদ আহমদ। ‘ই-কার্ড’প্রাপ্তদের মধ্যে যাঁদের পাসপোর্ট নেই, তাঁদের দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট প্রদানে দূতাবাস উদ্যোগ নেবে বলেও জানান তিনি।
শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের আরো জানান, অবৈধ শ্রমিকদের জন্য এটাই শেষ সুযোগ। অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবশ্যই `ই-কার্ড’ করতে হবে। ই-কার্ড নিবন্ধন চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। কোনোভাবেই এই সময়সীমা বর্ধিত করা হবে না এবং যাঁরা এই সুযোগের পরও ই-কার্ড করবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে মালয়েশিয়া সরকার এবং অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের ই-কার্ডের জন্য কোনো এজেন্ট বা দালালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এ রাষ্ট্রদূত।
তাই কোনো এজেন্টের কাছে না গিয়ে নিয়োগকর্তা এবং অবৈধ শ্রমিককে সশরীরে যেকোনো স্টেট ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ই-কার্ড নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
তিনি জানান, শুধু পাঁচটি সেক্টরের জন্য ই-কার্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো প্ল্যান্টেশন, এগ্রিকালচার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, কনস্ট্রাকশন ও সার্ভিস সেক্টর। এই ই-কার্ডের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন লাখ অবৈধ শ্রমিক নিবন্ধিত হবেন বলে জানালেন হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত শুধু ১৫টি দেশের অবৈধ শ্রমিকরা এই ই-কার্ড পাবেন। এই ১৫ দেশ হলো—বাংলাদেশ, ফিলিপিন্স, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে পুত্রজায়াস্থ মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক দাতো হাজি মুস্তাফার সভাপতিত্বে চলমান ‘ই-কার্ড’ এনফোর্সমেন্ট ক্যাড বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব সোর্স কান্ট্রির হাইকমিশন বা এমবাসির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে সভায় প্রতিনিধিত্ব করেন কাউন্সিলর (শ্রম) সায়েদুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) তাহমিনা ইয়াসমিন এবং দ্বিতীয় সচিব (শ্রম) ফরিদ আহমেদ।
সভায় ‘ই-কার্ড’ প্রদান কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করা হয়। তা হলো ‘ই-কার্ড’ কর্মসূচি মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হওয়া রিহায়ারিং কর্মসূচির সহায়ক একটি কর্মসূচি। এ কর্মসূচির মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ হতে ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত করা হয়েছে। তিনটি শ্রেণিভুক্ত কর্মীরা ব্যতিরেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সব বিদেশি শ্রমিক উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বিনামূল্যে ‘ই-কার্ড’-এর জন্য রেজিস্টার্ড হতে পারবেন।
এ তিনটি শ্রেণি হচ্ছে, যাঁরা ডাক্তারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে বা চলমান আছে এবং যেসব কর্মী বৈধভাবে কোনো কর্মক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু তাঁরা মালিকপক্ষকে অবহিত না করে পালিয়ে গেছেন এবং অফিস তাঁর বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে অভিযোগ দাখিল করেছে।
যখনই রেজিস্ট্রশন করা হোক না কেন, ‘ই-কার্ড’-এর মেয়াদ থাকবে ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০১৮ পর্যন্ত।
দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা ইতোমধ্যে কোনো ভেন্ডর (যেমন ম্যাগ) কোম্পানির মাধ্যমে রিহায়ারিংয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু কোনো কারণবশত বৈধ ওয়ার্ক পারমিট পাননি, তাঁরা এবং যাঁরা কোনো রেজিস্ট্রেশন করেননি, তাঁরাসহ সব অবৈধ কর্মী কোম্পানির মালিক বা এমপ্লয়ারসহ সরাসরি পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টার বা ১২টি প্রাদেশিক ইমিগ্রেশন অফিসে ‘ই-কার্ড’-এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
‘ই-কার্ড’প্রাপ্তি বিদেশি কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘ই-কার্ড’প্রাপ্তির পর বিদেশি কর্মীরা স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার লক্ষ্যে রিহায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় চলে আসবেন। যদি কোনো বিদেশি কর্মী ‘ই-কার্ড’ পেতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর জন্য চলমান ‘থ্রি প্লাস ওয়ান’ প্রোগ্রামের আওতায় দেশে ফিরে যাওয়া কল্যাণকর হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যত ‘ই-কার্ড’ প্রদান করা হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশিরা। সভা শেষে সব দেশের প্রতিনিধিকে সরেজমিনে কীভাবে ‘ই-কার্ড’ বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি সায়েদুল ইসলাম ৩৯টি ‘ই-কার্ড’ বাংলাদেশিদের মধ্যে বিতরণ করেন।