আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি গবেষকের মশানিধন যন্ত্র
মশা নিধনে খুব শিগগির আন্তর্জাতিক বাজারে আসছে বাংলাদেশি গবেষক আব্দুল হামিদের আবিষ্কৃত এইচইসি মসকিউটো কিলার বা হামিদ ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল মসকিউটো কিলার।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ভিস্তানা হোটেলের বলরুমে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে এ মশানিধন যন্ত্র বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক ডিসকাশন অ্যান্ড লাউন্সিং অব এ নিউ ইনভেনটেড মসকিউটো কিলিং ডিভাইস, মালয়েশিয়া’ অনুষ্ঠানে যন্ত্রের উপকারিতা তুলে ধরেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. উরম কুমার বড়ুয়া ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার।
ডা. উরম কুমার বড়ুয়া বলেন, প্রাণঘাতী জিকা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। ঠিক তখনই এ ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকার পন্থা উদ্ভাবন করেছেন মো. আবদুল হামিদ। ক্ষতিকর মশার কয়েলের পরিবর্তে এটি একই সঙ্গে কার্যকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামের হামিদ উদ্ভাবিত মশক নিধন যন্ত্রটি ১৮ মাস পর্যবেক্ষণের পর গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ গেজেটে বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে। নতুন এ যন্ত্রের নাম দেওয়া হয় এইচইসি মসকিটো কিলার’ (হামিদ ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল মসকিউটো কিলার)।
এ বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এম এ হামিদ বলেন, এরই মধ্যে মশা নিধনে ইলেকট্রনিক, ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ও রাসায়নিক যেসব উপকরণ, যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা হয়েছে তার থেকেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে আমার উদ্ভাবিত ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল মসকিউটো কিলার।
৩৪ বছর বয়সী এ তরুণ উদ্ভাবক বলেন, মশা নিধনের এ যন্ত্র এবং এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে কোনো বিষক্রিয়া ছড়াবে না। বরং যন্ত্রটি মশাকে আকৃষ্ট করবে। যন্ত্রটির মধ্যে যে রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে দেখতে তা একধরনের খাদ্যের মতো। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে যেভাবে মশা আক্রমণ করে ঠিক সেভাবে মানুষ মনে করে ওই যন্ত্রটির সংস্পর্শে চলে আসবে মশা।
এক ফুট উচ্চতা এবং ছয় ইঞ্চি প্রশস্ত এই যন্ত্রটিতে পাঁচ ওয়াটের একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব থাকবে। বৈদ্যুতিক সুইচে যন্ত্রটি লাগিয়ে দিলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মশা নিধন শুরু হয়ে যাবে। দুই হাজার বর্গফুটের মধ্যে যত মশা থাকবে সব মশা যন্ত্রের ভেতর ঢুকে যাবে।
ঘরে-বাইরে সব জায়গায় এ যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুৎ ছাড়াও ব্যাটারি দিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা চলবে। যন্ত্রটির ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। বিদ্যুৎ খরচ হবে সাত ওয়াট। একটি রিফিল দিয়ে (রাসায়নিক দ্রব্য) চার মাস চলবে। পরবর্তী প্রতি রিফিলের মূল্য ১০০ টাকা। একটি রিফিলসহ যন্ত্রটির এককালীন মূল্য দুই হাজার টাকা। চার মাস অন্তর রিফিল পরিবর্তন করতে হবে।
হামিদ বলেন, এ যন্ত্রটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থযুক্ত, বিষাক্ত ধোঁয়াহীন, শব্দহীন, কয়েল ও স্প্রের মতো বায়ু দূষণ করে না। এটি দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব। ডিম লাইটের মতো জ্বলে, সহজে বহনযোগ্য, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও স্থায়ীভাবে মশা নিধন করে। একই সঙ্গে যন্ত্রটির রয়েছে এক বছরের ওয়ারেন্টি।
হামিদ আরো বলেন, এটি আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৫ মে চীনের হার্মেস সান করপোরেশন লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এরপর ভারত সরকারের কাছেও আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
প্রক্রিয়া চলছে ব্রাজিল ও আমেরিকান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের। হামিদ আশা প্রকাশ করেন, তার আবিষ্কৃত এইচইসি মসকিউটো কিলারে জিকা ভাইরাসের বাহক এডিস মশা নিধন হবে এবং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাবে।
পণ্যটির আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিতেই মেড ইন মালয়েশিয়া হিসেবে কুয়ালালামপুর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন উদ্ভাবক আবদুল হামিদ।