ভারতে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই কোলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে শুরু হয়েছে নানা অনুষ্ঠান।
ভাষা ও চেতনা সমিতির উদ্যোগে কলকাতায় ‘বাংলা আকাদেমি’র সামনে মঙ্গলবার সারারাত ধরে পালিত হয় বাংলা ভাষা উৎসব। এই উৎসবে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও বাংলাদেশের শিল্পীরা।
ভাষা ও চেতনা সমিতির পক্ষে ইমানুল হক জানান, রাত ১২টায় মশাল মিছিল, বাউল, ফকির, সুফিগান ও কীর্তন শুরু হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনভর চলবে এই ধরনের নানা অনুষ্ঠান। বুধবার সকালে ভাষা শহীদ স্মারক সমিতির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কলকাতার কর্জন পার্কে ভাষা শহীদদের উদ্দেশে শহীদ স্মারকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।
আজ বুধবার সকালে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিনের পক্ষ থেকে একটি প্রভাতফেরি বের করা হয়। কলকাতার পার্ক সার্কাসের বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রের সামনে থেকে বের হয় প্রভাতফেরিটি। এরপর কলকাতার পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টে ক্রসিং-আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড ধরে পৌঁছায় উপহাইকমিশনে প্রাঙ্গণে। সেখানে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস নিয়ে বাণী পাঠ ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
এ সময় কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই এই দিনটা খুব গর্বের দিন। আজকের দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর পিছনে বাংলাদেশের অবদান অনেক।’
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে সকালে কলকাতার একুশে উদ্যানে শহীদ স্মারকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কলকাতার গগনেন্দ্র আর্ট গ্যালারিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে চিত্র ও ভাস্কর্যের এক প্রদর্শনী। যা চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে দিবসটি পালনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
ভারত-বাংলাদেশে সীমান্তের পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে একুশ উদযাপন করা হয়। দুই বাংলা মৈত্রী সমিতির উদ্যোগে নো-ম্যানস ল্যান্ডের শহীদ বেদীতে ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এখানে দুই দেশের ১০০ জন করে মোট ২০০ জন মানুষ রক্ত দান করেন। যে রক্ত বিনিময় করা হয় দুই দেশের মধ্যে। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘একুশের চেতনায় দুই বাংলাকে রক্তের বন্ধনে বাঁধতে এই রক্তদানের প্রয়াস।’
পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলার বাইরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিরক্ষা সমিতির উদ্যোগে একুশে উদযাপন করা হয়।