নিউইয়র্কে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালিত
যথাযোগ্য মর্যাদা ও অসংখ্য প্রবাসী শিশুর আনন্দঘন উপস্থিতির মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে উদযাপিত হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস।
অনুষ্ঠানে কেক কাটা ছাড়াও ছিল শিশু কিশোর রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুরো আয়োজন রূপ নেয় জমকালো এক শিশুমেলায়। গতকাল রোববার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের এই আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে কুইন্স লাইব্রেরি।
লাইব্রেরির চিলড্রেন্স ডিসকভারি সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা এবং কুইন্স লাইব্রেরির প্রতিনিধি মাহেন্দ্র ইন্দ্রজিৎ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, 'যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শিশুরা লেনসন ম্যান্ডেলাকে জানবে, যেভাবে ভারতের শিশুরা মহাত্মা গান্ধীকে জানবে, ঠিক তেমনিভাবেই বাংলাদেশের শিশুরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে জানবে। জাতির পিতা তাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বের মাধ্যমে জেল, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, কারাবরণ সহ্য করে আমাদের শিশুদের জন্য এক স্বপ্নময় স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন।' তাই দেশ ও প্রবাসের সব বাঙালি শিশু জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে বড় হয়ে উঠবে, এমন প্রত্যাশার কথাই তুলে ধরেন তিনি।
উপমন্ত্রী ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানটি শিশুদের শেখানো এবং এর মর্মার্থ বুঝতে সহায়তা করতে অভিভাবকদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এই স্লোগানটি এখন আর কোনো রাজনৈতিক স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি আমাদের পরিচয় ও অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে।’
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত শিশুদের বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে অংশবিশেষ পড়ে শোনান।
নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা জাতির পিতার জন্মদিন এবং বাংলাদেশের জাতীয় শিশু দিবসের এই আয়োজনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারাকে সম্পৃক্ত করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘এর মাধ্যমে জাতির পিতার বিশ্বজনীনতা আরো বিকশিত হচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তাঁর আদর্শ সম্প্রসারতি হচ্ছে।’ এ ছাড়া এরইমধ্যে কুইন্স লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইসহ বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংবলিত বই দিয়ে ‘বাংলা সেন্টার’ স্থাপন করার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কনস্যুলেট জেনারেল অফিস কাজ করছে বলে জানান তিনি। আগামী বছর জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আরো বড় কলেবরে উদযাপন করার প্রত্যাশার কথাও জানান কনসাল জেনারেল। বঙ্গবন্ধু কীভাবে কারাগারে থেকে শেখ রাসেলের সাথে যোগাযোগ করতেন এবং রাসেল কীভাবে বঙ্গবন্ধুর অভাব উপলব্ধি করতেন, তা জাতির জনকের ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই থেকে শিশুদের উদ্দেশে পাঠ করে শোনান তিনি।
কুইন্স লাইব্রেরির প্রতিনিধি মাহেন্দ্র ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে আমাদের এই সাংস্কৃতিক বিনিময় অব্যাহত থাকবে।’
এ ছাড়া এসময় নিউইয়র্ক প্রবাসী বিশিষ্ট বাংলাদেশী নাগরিক, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষবিদ, শিল্পী, সাংস্কৃতিককর্মী, সমাজসেবক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতি সম্বলিত ক্রেস্ট এবং অংশগ্রহণকারী সব শিশুকে শিশুদের মেডেল তুলে দেন অতিথিরা।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার ছবি এঁকে 'ক' শাখায় প্রথম হয়েছে শ্রেষ্ঠা দেবনাথ। আর মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর ছবি আঁকার জন্য 'খ' শাখায় প্রথম হয়েছে অপর্ণা আমিন। এ ছাড়া রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে নির্ঝর দেবনাথ।
এর আগে সকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিজ নিজ কার্যালয়ে জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৯ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, আলোচনা সভা এবং বিশেষ দোয়ার আয়োজন করে।