নিউইয়র্কে ড্যাফোডিল অ্যালামনাইদের মিলনমেলা
দুই পাশে কংক্রিটের অরণ্য। পরিপাটি সাজানো-গোছানো। মাঝখানে বয়ে চলা উত্তাল নদীতে ছুটে চলেছে অ্যাম্পায়ার ক্রুজের তিনতলা জাহাজটি। ভেতরে চলছে অসাধারণ এক আনন্দ আয়োজন। এ যেন এক মহামিলনমেলা। আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ড্যাফোডিল অ্যালামনাই ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঢাকা থেকে আসা প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একই সুতোয় গাঁথার এই অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল পরিবারের সদস্যরা হারিয়ে গেলেন অতীতে। স্মৃতি রোমন্থন, পেছনে ফেলে আসা সোনালি দিনের বর্ণনা আর ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথাই উঠে এলো তাঁদের কথামালায়।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১টায় ছেড়ে যায় বিলাসবহুল জাহাজটি। ম্যানহাটনের এফডিআরের স্কাইপোর্ট মেরিনা থেকে স্বচ্ছ স্রোতস্বিনীর বুক চিড়ে জাহাজটি ছুটে চলে স্ট্যাচু অব লিবার্টির দিকে। সেখান থেকে বিভিন্ন পথে ঘুরে বেড়ায় চার ঘণ্টারও বেশি।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে ড্যাফোডিল পরিবারের ৬০ হাজারের মতো সাবেক শিক্ষার্থী। তাঁদের হারিয়ে যেতে না দিয়ে বরং তাদের জন্য একটি মঞ্চ প্রস্তুত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর তারই অংশ হিসেবে লন্ডনের পর এবার নিউইয়র্কে আয়োজন করা হলো সাবেকদের মিলনমেলার। আর এতে নর্থ আমেরিকায় ছড়িয়ে থাকা ড্যাফোডিল পরিবারের দুই শতাধিক সদস্য অংশ নেন। তাঁদের কেউ পড়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, কেউ পড়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি (ডিআইএ) অথবা ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটিতে, কেউ পড়েছেন ড্যাফোডিলের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আবার অনেকে এই পরিবারের হয়ে কাজ করেছেন। এই আয়োজনে শামিল হয়েছিলেন তাঁরাও।
জমকালো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, ড্যাফোডিল পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। এ ছাড়া যোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান ও চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ এমরান হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিলের নর্থ আমেরিকায় এমন একটি আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অ্যালামনাইদের কাজে লাগানো হয়। এক অর্থে এতে গোটা দেশটাই উপকৃত হয়। এমন উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি ড্যাফোডিল পরিবারকে ধন্যবাদ দেন।
মাসুদ বিন মোমেন আরো বলেন, ‘সামনে আসছে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন। র্যাপিডলি ডেভেলপিং টেকনোলজি আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি অনেকটাই ভূমিকা রাখতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এই খাতে সাফল্য অর্জন করছে, তাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশের মেধাবী সন্তানদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ড্যাফোডিল পরিবারের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘ইমোশন বা আবেগ আমাদের বড় একটি শক্তি। এই ইমোশনকে যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব।’ বিভক্তি নয়, ঐক্যের কথা উল্লেখ করে ড. সবুর খান বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ড্যাফোডিল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই। যার অংশ হিসেবে ড্যাফোডিল অ্যালামনাইরা দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবে।’
এ সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, নন-রেসিডেন্স ড্যাফোডিল অ্যালামনাই লন্ডন চ্যাপ্টার নামে একটি ওয়েবসাইট এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এবার নর্থ আমেরিকার ক্ষেত্রেও এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরির ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, এর মধ্য দিয়ে প্রবাসে থাকা সাবেকরা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারবেন, নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করতে পারবেন, সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সবশেষে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ এমরান হোসেন। জিয়াউল সুমনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সাবেকদের অনেকেই বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও র্যাফেল ড্র।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের এমন আয়োজন ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।