সাড়ে চার শ বছরের ‘ইটনা শাহি মসজিদ’

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মুঘল স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ‘ইটনা শাহি মসজিদ’। লোকমুখে যা গায়েবি মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় হাঁটিতে অবস্থিত। এটি স্থানীয়ভাবে অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪২৫ বছর পূর্বে বারো ভূঁইয়ার প্রধান ঈসা খাঁর সভাসদ মজলিশ দেলোয়ারের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয় মসজিদটি। তবে মসজিদটি সুনির্দিষ্টভাবে কত বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে, এমন কোনো চিহ্ন বা নামফলক পাওয়া যায়নি। তবে এই মসজিদ নিয়ে এলাকায় বেশ কৌতুহল রয়েছে। মসজিদের ইতিহাস নিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্নজন বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন।
মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত, যা একটি বেদির উপর স্থাপিত এবং চারপাশে মোটা দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার, প্রস্থ ৯.৫ মিটার এবং উচ্চতা কার্নিশ পর্যন্ত ৬ মিটার। ছাদে তিনটি গম্বুজ, তিনটি প্রবেশদ্বার এবং ভেতরে তিনটি মেহরাব রয়েছে। মূল মসজিদের সামনে ১৩ মিটার প্রশস্ত একটি খোলা বারান্দা রয়েছে, যা অনুচ্চ দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দেয়ালের সঙ্গে একটি উঁচু বেদি থেকে প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আজান দেওয়া হয়।
মসজিদটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মসজিদটিকে ‘গায়েবি মসজিদ’ বলে অভিহিত করেন, যা এর ইতিহাসকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
মসজিদের মোয়াজ্জেম আব্দুস সাত্তার বলেন, মসজিদটি দীর্ঘ কয়েক শত যুগ আগে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদে বেশ কিছু আকর্ষণ আছে, মসজিদে বিদ্যুৎ না থাকলেও আলোকিত থাকে আবার মসজিদে গরমের দিনেও ঠান্ডা থাকে। মসজিদের দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন পাথরের কাজ করা আছে, যা এখনও চকচক করে।
মসজিদের ইমাম মাওলানা একেএম নূরুল উল্লাহ বলেন, আমার দাদা ও বাবা আজীবন এই মসজিদের ইমাম ছিলেন, আমিও বর্তমানে ইমামের দায়িত্ব পালন করছি। আমরা এলাকার মুরুব্বিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য শুনে এসেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সঠিকভাবে কত সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলতে পারেননি। কয়েক বছর পূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা রওশন আলী রুশো তিনি নিজের বইয়ে লিখেছেন দেওয়ান মজলিশ উনার আমলে মসজিদটি তৈরি। এ ছাড়াও দেওয়ান আব্দুর রহিম সাহেব ১৯৯৪ সালে ঢাকা থেকে ভূতত্ত্ববিদ এনে মাটি পরীক্ষা করেন। সেই তথ্যানুযায়ী, এই মসজিদে ৫০০-৬০০ বছর পূর্বের হতে পারে।
ঐতিহাসিক ইটনা শাহি মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের ইটনায় ঐতিহাসিক একটি মসজিদ আছে, যেটি স্থানীয় ভাষায় গায়েবি মসজিদ বলে থাকে। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি এটি মুঘল আমলের স্থাপনা। মসজিদটিতে পুরাকীর্তির একটি গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও মসজিদ এখনও মজবুত আছে। মসজিদটি সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।
ইটনা শাহি মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়; এটি বাংলার স্থাপত্যশৈলী, ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি মূল্যবান নিদর্শন এই ঐতিহাসিক মসজিদটি।