৮২৪ বছরের পুরোনো নেত্রকোনার হারুলিয়া মসজিদ

গারো পাহাড় আর হিমালয় বিধৌত প্রকৃতির নির্মল আবহের প্রশান্তির নীড় নেত্রকোনা জেলা। ধর্ম-বর্ণ আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বেলাভূমি নেত্রকোনা জেলা, যার বাস্তব প্রমাণ একদিকে বাংলাদেশের সনাতনি ঐতিহ্য আর কৃষ্টিতে ভরপুর বিশাল জনপদ এই জেলায়। অন্যদিকে এখানেই রয়েছে বহু শতাব্দীর পুরনো অসংখ্য মুসলিম স্থাপত্য ও কালচারাল পটভূমি। এসব প্রাচীন স্থাপত্যের একটি ৮২৪ বছরের পুরনো নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ‘হারুলিয়া মসজিদ’।
মুঘল আমলে নির্মিত এ সুপ্রাচীন মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মসজিদটি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে অবস্থিত। উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরত্বে প্রত্যন্ত হাওর এলাকায় এটির অবস্থান। মসজিদকে ঘিরে জনশ্রুতিরও শেষ নেই। কারও কাছে পরিচিত ‘গাইনের মসজিদ’ আবার কারও কাছে ‘হারুলিয়া মসজিদ’।
মুঘল শাসন আমলে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও অনুসারী শাইখ মোহাম্মদ ইয়ার নামক এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির দেয়ালে ফার্সিতে শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম ও ১২০০ খ্রিস্টাব্দ লেখা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা।
মাত্র তিন শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত মসজিদটির চার কোনায় চারটি পিলার রয়েছে, যার উপরিভাগ কলসি দিয়ে গম্বুজাকার কারুকার্য মণ্ডিত। মসজিদের পুরো ছাদ জুড়ে বিশাল একটি গম্বুজও রয়েছে। মসজিদের উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণে তিনটি লম্বা আকারের দরগা এবং সামনের অংশে ছোট্ট একটি চার চালা টিনের ঘরও রয়েছে। মসজিদের নির্মাণ লৈশী ও অবকাঠামো পোড়ামাটি, লালি, চুন, চিনি, চিটাগুড়, কষ এবং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে।
মূল মসজিদের ভেতর দুই কাতারে ১৮ জন ও ইমামসহ মোট ১৯ জন মুসুল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। জায়গা কম থাকায় মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে পুরাতন মসজিদটির সঙ্গেই আরেকটি নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটির সামনে রয়েছে সুবিশাল জালিয়ার হাওর। হাওর সংলগ্ন এ মসজিদটি মুঘল আমলের মানুষের ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামি ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগে রাতের আঁধারে কে বা কারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে ফার্সিতে লেখাযুক্ত একটি বহু মূল্যবান ছয় থেকে সাত কেজি ওজনের কষ্টি পাথর চুরি করে নিয়ে যায়।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ওই সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন, কিন্তু সেই পাথর আজও উদ্ধার করা যায়নি।
নেত্রকোনা জেলার তথা দেশের অন্যতম প্রাচীন আট শতাধিক বছর আগের মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে তার জৌলুস হারিয়ে ক্রমশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুততম সময়ে সংস্কার না করতে পারলে হারিয়ে যেতে পারে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ।