সি পার্লের ৩৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের শেয়ারে বড় অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে।
সম্প্রতি শেয়ার কেনাবেচার এ চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। চুক্তি অনুযায়ী, লুক্সেমবার্গ ভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি জেম গ্লোবাল ইল্ড এলএলসি এসসিএস সি পার্ল বিচ রিসোর্টের ৩৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। গত ১৮ অক্টোবর এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয় চুক্তির (এসপিএ) অনুমোদন দেয় কমিশন ফলে আর কোন বাধা রইল না বিদেশি বিনিয়োগে।
জেম গ্লোবাল ইল্ড এলএলসি এসসিএসের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগ রয়েছে। টাকার আরও অবমূল্যায়নের শঙ্কায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার গত কয়েক বছর ধরেই বিদেশিরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এমন সময় সি পার্লের শেয়ারে জেম গ্লোবালের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছে যখন দেশে ডলারের তীব্র সংকট চলছে। জেম গ্লোবালের এই বিনিয়োগ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। ব্যাংকঋণের নির্ভরতা কমিয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
সি পার্ল বিচ রিসোর্টের দুটি প্লেসমেন্টহোল্ডার প্রতিষ্ঠান ও একজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডার সম্মিলিতভাবে জেম গ্লোবালের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য চুক্তি করেছে যা অতি শিগ্রই বাস্তবায়ন হবে। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে সি পার্লের ১ কোটি ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৬টি শেয়ার ধারণ করছে। এরমধ্যে প্লেসমেন্টধারী বেঙ্গল ভেকেসন ক্লাব লিমিটেড ১ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ২৯৬টি ও ভেনাস বিল্ডার্স লিমিটেড ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬১টি সি পার্লের শেয়ার ধারণ করছে। এসইসির শর্তানুযায়ী, চার ধাপে আগামী এক বছরের মধ্যে জেম গ্লোবালের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হবে।
এ বিষয়ে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল হক শামীম বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে লুক্সেমবার্গ ভিত্তিক জেম গ্লোবাল ইল্ডের। সি পার্লের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ শুরু করল। জেম গ্লোবালের কাছে ৩৫০ কোটি টাকা সমপরিমাণের শেয়ার বিক্রি করা হবে। এ অর্থ থেকে ১০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হবে। এর বাইরে ১০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হবে। অবশিষ্ট অর্থ পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ২ অক্টোবর সি পার্ল বিচ রিসোর্টের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে শেয়ার ক্রয় চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে এসইসি। এসব শেয়ারের লেনদেন মূল বাজারের বাইরে সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া সি পার্লের সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার জেম গ্লোবাল ইল্ড ধারণ করতে পারবে। প্রতিবার শেয়ার বিক্রির সময় এসইসির পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ঘোষণা দিতে হবে।
জানা গেছে, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা যেদিন শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেবেন, সেদিন থেকে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের ওয়েটেড এভারেজ প্রাইসের ১০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে জেম গ্লোবালের কাছে শেয়ার বিক্রি করবেন। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রির নোটিশ প্রদান করার পরবর্তী ১৫ কার্য দিবসের ওয়েটেড প্রাইজ এর ১০% শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে জেম গ্লোবালের কাছে শেয়ার বিক্রি করবেন তবে সে ক্ষেত্রে এস ই সি এর নির্দেশনা মোতাবেক ফ্লোর প্রাইজ হবে ২ মাস এর ওয়েটেড এভারেজ অর্থাৎ উক্ত এভারেজ প্রাইজ এর নীচে বিনিয়োগকারী (জেম গ্লোবাল) এর কাছে শেয়ার বিক্রি করতে না পারে।
কক্সবাজারের ইনানী বিচে ২৫ একর জমির ওপর স্থাপিত পাঁচ তারকা হোটেল সি পার্ল। ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চালু হওয়া এই হোটেলে ৪৯৩টি কক্ষ ও স্যুট রয়েছে। পাশাপাশি ৯টি রেস্টুরেন্ট, ৩টি বার, ৬টি মিটিং ও কনভেনশন ভেন্যু, ২টি সুইমিংপুল, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন কোর্টসহ নানা সুবিধা সি পার্ল কক্সবাজারকে দেশের লাক্সারি রিসোর্টের কাতারে শীর্ষস্থান এনে দিয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পৃথিবীর সেরা লাক্সারি হোটেলগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পাকে পৃথিবীর সেরা বিচ সাইড লাক্সারি রিসোর্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গ্লোবাল অর্গানাইজেশন। সে সুবাদে দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডস জিতে নিয়েছে সি পার্ল। সেরা বিচ সাইড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি সেরা লাক্সারি স্পা অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে সি পার্ল।
গত বৃহস্পতিবার সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ২০৮ টাকা ৬০ পয়সা। মহামারি করোনার প্রকোপ কমে আসার পর থেকেই এই পাঁচ তারকা হোটেলটির আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২২-২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৬ টাকা ৬৩ পয়সা। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে সি পার্লের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার।