অনাস্থার পুঁজিবাজারে পতন বাড়ছে
নানা অনিয়মসহ জবাবদিহিতার অভাবে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থায় পতনের কবলে দেশের পুঁজিবাজার। এতে দিনদিন হারিয়েছেন তাদের পুঁজি। অস্বাভাবিকভাবে সূচক ও বাজার মূলধন কমছে। প্রতিদিনই কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানি দর। এই তালিকায় নামিদামি কোম্পানির সংখ্যাই বেশি বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১০ আগস্ট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল চার হাজার ৫৩৩ পয়েন্ট। সেখান থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ১০ অক্টোবর সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছিল সাত হাজার ৩৬৭ পয়েন্ট। ধারাবাহিক পতনে পড়ে আজ বুধবার (২৮ মে) সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬১৫ পয়েন্টে। গত বছরের ৮ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। আজ লেনদেন হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৪১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। গত ৮ আগস্ট বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ তিন হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৬১ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের পতন প্রসঙ্গে মতিঝিলে তিন সিকিউরিটিজ হাউজের পাঁচজন বিনিয়োগকারী জানান, দেশের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে চলছে পুঁজিবাজার অংশীজনদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। এর ফলে পতন বৃত্ত দিনদিন বাড়ছে। যদিও এই বৃত্ত কমাতে সম্প্রতি বিএসইসি বসেছিল পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে। তাতে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। উল্টো এ নিয়ে জড়িয়ে পড়েছে নানামুখী তর্ক-বির্তক। এতে বাড়ছে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও অবিশ্বাস। এতে পরিবেশ আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে। এছাড়া চলছে দেশের অর্থনীতিতে টানপোড়েনসহ নানা অনিশ্চয়তা। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রতি চরম অনাস্থা তৈরি হয়। সবকিছু মিলিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গত ১০ মাসে প্রায় ৮০ শতাংশ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজির অর্ধেকের বেশি হারিয়ে পথে বসে পড়েছে। আরও পুঁজি হারানোর ভয়ে অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে চুপচাপ বসে আছেন। পরিস্থিতি পরিবর্তনের অপেক্ষা করছেন। অনেকে আবার বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। তারা বলেন, গত ১০ মাস ধরে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ছে, পুঁজি ক্যাশ করার লক্ষ্যে তারা বিক্রি করছেন। এই কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অনাস্থায় পুঁজিবাজার অবনতির দিকে যাচ্ছে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, পুঁজিবাজারের দীর্ঘদিন ধরে পতন চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজারের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সাধারণসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এখন চরমে। পুঁজি হারিয়ে সবাই এখন অসহায়বোধ করছে। অনেকেই ক্ষতিতে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে পুঁজি নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। যারা আছে তারা প্রায় সবাই বিনিয়োগ না করে হাতগুটিয়ে আছেন।
আঞ্চলিক নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জানিয়ে বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ও সচেতনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
এদিক গত পাঁচ কার্যদিবসের মতো আজ বুধবারও লেনদেন শেষে ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে। ৬২ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমে এদিন ডিএসইএক্স দাঁড়ায় চার হাজার ৬১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। এটা গত চার বছর ৯ মাস ১৮ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া ডিএসইতে এদিন ডিএস৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে। ডিএসইএস সূচক ১৬ দশমিক ২৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার আট দশমিক ১৪ পয়েন্টে। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ২৭২ কোটি টাকার শেয়ার। আজ লেনদেন হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৪১ হাজার ৯৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একদিনের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে চার কোটি ৩৫২ কোটি টাকা। আজ লেনদেন হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির এবং কমেছে ২৯৫টির বা ৭৪ শতাংশ। শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টির।