বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকে বিএসইসির চিঠি

দুর্বল শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে আমানতকারীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষার কথা বলা হলেও ব্যাংকগুলোর সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে তেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এসব কারণে পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একীভূত করতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এদিকে গুঞ্জন উঠেছে ব্যাংক রেজুলেশন ২০২৫ অনুযায়ী, একীভূতকরণের ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। নতুন ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। সেখানে ওই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের কোনো শেয়ার থাকবে না। এসব ব্যাংকের শেয়ার নতুন করে ইস্যু করা হবে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচিত পাঁচ ব্যাংকের সংকটের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন। দায়ী যদি করতে হয় তবে ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা করা উচিত। তাই তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দায় নিরূপণের দাবি জানান তারা। তাদের মতে, সরকার যেমন আমানতকারীদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তেমনই বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে ন্যায্যতা বজায় রাখা উচিত।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের বর্তমান এই অবস্থার জন্য কোনোভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন। অপরদিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাগ্রস্ত থাকা নয়টি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ১৪টি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এর সঙ্গে যুক্ত। পাঁচ ব্যাংক একীভূত করা এবং নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে বিএসইসির সঙ্গে পরামর্শ করেনি।
গভর্নরের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বিএসইসি বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে— ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত সম্পদ মূল্যায়নের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স, ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক, ক্লায়েন্ট বেজ, হিউম্যান রিসোর্স বেজ, সার্ভিস ডেলিভারি মেকানিজম এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু ইত্যাদি মূল্যায়ন করে বিক্রয় মূল্য বিবেচনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নির্ধারণ করা। ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত সম্পদ মূল্যায়নের পাশাপাশি ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত জামানত এবং দায়ী ব্যক্তিপণের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে আদায়যোগ্য অর্থ বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ নির্ধারণ করা। ধারা-৭৭ এ বর্ধিত দায়ী ব্যক্তিগণ কর্তৃক ধারণকৃত শেয়ার ব্যাতীত অন্যান্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা বা সাধারণ বিনিয়োগকারী কর্তৃক বিনিয়োগকৃত অর্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীর ন্যূনতম স্বার্থ মূল্য বিবেচনা করে একীভূতকরণের অনুপাত নির্ধারণ করা। উপরোক্ত মূল্যায়ন বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক পাঁচটির সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ মূল্য অনুপাতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা। ব্যাংকগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ মূল্য অনুপাত নির্ধারণ ও তা ঘোষণা না করে অথবা সাধারণ বিনিয়োগকারী কর্তৃক ধারণকৃত শেয়ারের এক্যুইজেশন মূল্য নির্ধারণ এবং তা ঘোষণা না করে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত না করা।
বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার প্রসঙ্গে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে জানানো হয়েছে। একজন সাধারণ শেয়ায়হোল্ডারের যত ধরনের অধিকার পাওয়ার বিষয়টি আইনে বলা হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। যেন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।