চেনা প্রতিপক্ষের সামনে অচেনা বাংলাদেশ
নেই মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস। টেস্টের তিন ব্যাটিং স্তম্ভকে হারিয়ে ক্রাইস্টচার্চে টেস্ট শুরুর আগেই কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন নুরুল হাসান সোহান। অভিষেক হয়ে যেতে পারে নাজমুল হোসেন শান্তরও। টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো দেখা যাবে তামিম ইকবালকে। সব মিলিয়ে এই বাংলাদেশ যেন কিছুটা অচেনাই।
মুশফিক ও ইমরুলের পরিবর্তে যে সোহান ও সৌম্য সরকার মাঠে নামবেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে ক্রাইস্টচার্চে মুমিনুলের পরিবর্তে কাকে দেখা যাবে তা নিয়ে আছে সংশয়। মাঠে নামতে পারেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শান্ত। অথবা ২০১৫ সালের পর আবার সাদা পোশাকে দেখা যেতে পারে মুস্তাফিজুর রহমানকে।
যেটাই হোক, বাংলাদেশের এই দলটা যে টেস্টের জন্য খুবই অনভিজ্ঞ, তা স্পষ্টই বোঝা যায়। গত ম্যাচে টেস্ট অভিষেক হয়েছে শুভাগত ও তাসকিনের। আর কামরুল ইসলাম রাব্বি ও মেহেদী হাসান মিরাজ খেলেছেন তিনটি করে টেস্ট। সাকিব-তামিম ও রিয়াদকে বাদ দিলে দলের আটজনের টেস্ট ম্যাচ সংখ্যা একা রস টেলরের অর্ধেকের চেয়েও কম! এমন হতশ্রী পরিসংখ্যান নিয়েই আগামীকাল ক্রাইস্টচার্চের হেগলি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচ দিয়ে অধিনায়কত্বের অভিষেক হচ্ছে তামিম ইকবালের। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সাকিব আল হাসানের দলে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান তামিম। শুরুটা ভালো হলেও ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর সাকিব ও তামিম দুজনকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের আগে আবার সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান তিনি। তখন থেকেই মুশফিকের ডেপুটি হিসেবে কাজ করছেন তামিম। প্রায় তিন বছর পর অধিনায়ক হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দেবেন এই ব্যাটসম্যান। ওয়েলিংটন টেস্টে আঙুলে চোট পাওয়ায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দলে জায়গা পাননি মুশফিকুর রহিম। ক্রাইস্টচার্চে কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে টস করতে নামবেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। ওয়েলিংটনে শুরুটাও দারুণ করে তামিমরা। সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি আর মুশফিকের সেঞ্চুরিতে প্রথম টেস্টে প্রায় চারদিন আধিপত্য বিস্তার করে খেলে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত প্রথম টেস্টে হার মানে বাংলাদেশ। মুশফিক ও ইমরুল কায়েস ইনজুরিতে না পড়লে ম্যাচের চেহারা ভিন্ন হতেও পারত। ঊরুতে চোট পান ইমরুল কায়েস আর ব্যাট করার সময় ওয়েগনারের বলে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল আর ডান হাতের তর্জনীতে চোট পান মুশফিক। ব্যথা নিয়েই ১৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন মুশি। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার মাথায় চোট পান টাইগার অধিনায়ক। মুশফিকের বদলে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পালন করবেন নুরুল হাসান সোহান আর ইমরুলের বদলে ব্যাটিংয়ে উদ্বোধন করবেন সৌম্য সরকার। ওয়েলিংটনে ব্যাটিংয়ের সময় পাঁজরে আঘাত পাওয়ায় ছিটকে গেছেন মুমিনুল হক। তাঁর বদলে প্রথম একাদশে দেখা যেতে পারে শান্ত বা মুস্তাফিজকে।
অপরদিকে তামিম-সাকিবদের ছোবল মারার জন্য প্রস্তুত নেইল ওয়াগনার, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিরা। ম্যাচ শুরুর আগের দিন বোল্ট তো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হুমকিই দিয়ে রাখলেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে এই ম্যাচেও শর্ট পিচ বোলিং দেখা যাবে। সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে, শর্ট বলগুলো কেন দেওয়া হয়। ব্যাটসম্যানদের হতাশা বাড়ানোর জন্যই বাউন্সারগুলো দেওয়া হয়। কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এটা করা হয় না। বাউন্সারগুলো দেওয়া হয় যেন অন্য ডেলিভারিগুলো আরো কার্যকর করে তোলা যায়।’ গত ম্যাচে বাউন্সারের আঘাতে হাসপাতালে যেতে হয়েছে মুশফিককে। কিন্তু সেটা মাথায় রেখে কিছুতেই ছাড় দেবেন না কিউই বোলাররা। সব মিলিয়ে ক্রাইস্টচার্চে কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।