ক্রিকেটের কলঙ্কিত এক ইতিহাস
খেলার মাঠ মানেই যুদ্ধক্ষেত্র, প্রতিপক্ষের ওপর ঝঁপিয়ে পড়া আর জয়ের হাসিটা নিজের করে নেওয়া। তবে খেলার কিছু নিয়ম আছে, সঙ্গে প্রয়োজন খেলোয়াড়সুলভ আচরণ। আর যখন জয়ের নেশায় খেলোয়াড়সুলভ আচরণ নষ্ট হয়, তখনই পড়ে কালো দাগ। আজকের গল্পটা এমনই এক কলঙ্কিত ইতিহাস নিয়ে। ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে ক্রিকেটের স্পোর্টসম্যানশিপকে কলঙ্কিত করেন বিখ্যাত ইংলিশ ব্যাটসম্যান ও পরে কিংবদন্তি ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগ।
ঘটনাটা খুলেই বলা যাক। পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট চলছে। উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান বার্নার্ড জুলিয়েনের দিকে দিনের ডেলিভারিটি করলেন ইংল্যান্ডের ডেরেক আন্ডারউড। বলটি আলতো করে সিলি পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিলেন জুলিয়েন। রান নেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই বুঝতে পেরে নন-স্ট্রাইকে থাকা এলভিন কালিচরণ অনেকটা হেলেদুলেই প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। ঠিক তখনই টনি গ্রেগ বলটি কুড়িয়ে নন-স্ট্রাইকিং স্টাম্প ভেঙে দিলেন। কালিচরণ পপিং ক্রিজের বাইরে থাকায় আম্পায়ার তাঁকে আউট ঘোষণা করলেন। বিশ্ব ক্রিকেট তখন স্তব্ধ। ক্রিকেটের জেন্টেলম্যান খ্যাত ইংলিশ খেলোয়াড়ের থেকে এমন অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ দেখে বিস্মিত ক্রিকেটপ্রেমীরা। আর যখন তা করেন টনি গ্রেগের মতো বিখ্যাত ক্রিকেটার, তখন সেটা মাত্রাতিরিক্ত হয়েই যায়। তর্ক-বিতর্কের ঝড় ওঠে গেল ক্রিকেট মহলে। পরে অবশ্য আম্পায়ার কালিচরণের দণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করে দিলেও তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন বিখ্যাত ক্রিকেট অলরাউন্ডার টনি গ্রেগ। আর ক্রিকেটের পিতা ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সেই কালো দিনটি ৩ ফেব্রুয়ারি।
ঘটনার রূপকার অ্যান্থনি উইলিয়াম গ্রেগের ক্যারিয়ার শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কারি কাপ দিয়ে। সেখানে ল্যাংকাশায়ারের বিপক্ষে ২৩০ মিনিট ব্যাট করে ১৫৬ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নজরে আসেন ইংল্যান্ডের ক্লাব সাসেক্সের। বাবা স্কটিশ হওয়ায় ইংল্যান্ড জাতীয় দলে জায়গাও পেয়ে যান তিনি। টনি গ্রেগ তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারে ৫৪টি টেস্ট খেলে ৪০.৪৩ গড়ে মোট রান করেছেন তিন হাজার ৫৯৯। এর মধ্যে আছে আটটি শতক আর ২০টি অর্ধশতক। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ করেছিলেন ১৪৮ রান। বল হাতেও গ্রেগ ছিলেন দুর্দান্ত। টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর জমা হয়েছে ১৪১টি উইকেট। সেরা বোলিং ৮৬ রানে ৮ উইকেট।
গ্রেগ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২২টি। ২৬৯ রানের পাশাপাশি উইকেট পেয়েছেন ১৯টি। অধিনায়ক হিসেবেও ছিলেন দারুণ। তাঁর নেতৃত্বে ভারত সফরে এসে বিশাল ব্যবধানের এক ঐতিহাসিক জয় পায় টিম ইংল্যান্ড। অল্প সময়েই ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছিলেন তিনি।
ক্রিকেট থেকে অবসরের পর আজীবন চ্যানেল নাইনে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন তিনি। শেষ জীবনের অনেকটা সময় অসুস্থ ছিলেন গ্রেগ। ধরা পড়ে ফুসফুসে ক্যানসার। পরে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সিডনির ভিনসেন্ট হাসপাতালে বিশ্বকে বিদায় জানান তিনি।