এবার ভাগ্য বদলাবে দক্ষিণ আফ্রিকার?

অন্য সময় ভালো খেললেও রহস্যজনক কারণে নকআউট ম্যাচে বারবার ভেঙে পড়ে দলটি। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। প্রতিটি টুর্নামেন্টে নতুন কিছু ঘটলেও বদলায় না কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্য। ক্রিকেট দেবতা বিচিত্র কোনো কারণে এই দেশটির ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ। ১৯৯৮ সালের প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (নক আউট/মিনি বিশ্বকাপ) জয়ের পর এখন পর্যন্ত বড় আসরে দেশটির অর্জন শূন্য।
২২ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দাপুটে ক্রিকেট খেলে সেমিফাইনালে উঠে যায় দলটি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল শুরু হওয়ার আগেই হানা দেয় বৃষ্টি, খেলার দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪৫ ওভারে। গ্রায়েম হিকের ৯০ বলে ৮৩ রানের চমৎকার ইনিংসের ওপরে ভর করে ছয় উইকেটে ২৫২ রান করে ইংল্যান্ড। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য প্রোটিয়াদের লক্ষ্য ছিল ২২ রান। ১২ মিনিটের বৃষ্টি শেষে প্রথমে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে দেখা গেল নতুন টার্গেট লেখা হয়েছে ৭ বলে ২২ রান। কিছুক্ষণ পর সেখানে দেখা গেল ১ বলে দরকার ২২ রান। ম্যাচটা হেরে বসল প্রোটিয়ারা।
১৯৯৬ সালের দুর্দান্ত শুরু করেও সেমিফাইনালে আটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপযাত্রা। দুই বছর পরে অবশ্য প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জেতে দলটি। ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দল। পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে হাতে চলে আসা ম্যাচটিতে প্রোটিয়াদের হারের দৃশ্য তো কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ১৪ বলে ৩১ রানের টর্নেডো ইনিংসে দলকে জিতিয়েই ফেলেছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের করা শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে চার মেরে নিশ্চিতভাবে ম্যাচটি জিতে যাচ্ছিল দলটি। চতুর্থ বলে বোকার মতো রান আউট হয়ে গেলেন অ্যালেন ডোনাল্ড। এরপরই পুরোপুরিভারে ‘চোকার’ তকমাটা সেটে যায় প্রোটিয়াদের গায়ে।
২০০৩ সালে বিশ্বকাপটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আরেক দুঃখ বয়ে আনে। সেবারও বৃষ্টি আইনে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যায় দলটি। ১৯৯৬, ২০০৭ আর ২০১১ বিশ্বকাপেও নকআউট ম্যাচের ‘খাঁড়া’য় কাটা পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৯ রানে, ২০০৭ সালে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে, ২০১১ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৯ রানে আর ২০১৫ সালে গ্রান্ট এলিয়ট ও কোরে অ্যান্ডারসনের ব্যাটিং বীরত্বের কাছে নিশ্চিত জেতা ম্যাচটা হেরে যায় দলটি।
বরাবরের মতো এবারের বিশ্বকাপেও ফেভারিটের তকমা নিয়ে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, ডু প্লেসিস, ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি কোনো একটি ম্যাচ বের করে নেওয়ার জন্য এঁদের একজনই যথেষ্ট। আর কাগিসো রাবাদা, মরনে মরকেল, ওয়েইন পারনেল, ক্রিস মরিসদের সমন্বয়ে গড়া বোলিং লাইন আপটা তো টুর্নামেন্টেরই সেরা।
তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর আগে আত্মবিশ্বাসে কিছুটা চিড় ধরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ইংল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হেরে গেছে দলটি। শেষ ম্যাচটা জিতে অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে কিন্তু বড় টুর্নামেন্টে দুর্ভাগ্যের ইতিহাসের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বাজি ধরার লোক কম। তবে ডি ভিলিয়ার্স আমলা যদি নিজেদের সুনাম ধরে রেখে খেলতে পারেন তাহলে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে রাখা মুশকিল হবে।