শুভ জন্মদিন মেসি

ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকার নাম কি? জানি, জবাব দিতে এক সেকেন্ডও নেবেন না আপনি। অবিসংবাদিতভাবে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। পরিসংখ্যান-টরিসংখ্যান টানার দরকার নেই, ছোট থেকে বড় যে কোনো ফুটবলভক্তকে জিজ্ঞেস করলে এই উত্তরটিই পাওয়া যাবে। ভাবছেন হুট করে মেসিকে টানছি কেন। কারণ, আজ মেসির জন্মদিন। ১৯৮৭ সালের আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই বিস্ময়। শুভ জন্মদিন মেসি।
মেসির জন্ম আর্জেন্টিনার ছোট শহর রোজারিওতে। দেশটির সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলো মধ্যে রোজারিও একটি। এই শহরের উত্তর দিকে ব্যারিও লাস হেরাসে ছোট একটি বাড়িতে বেড়ে উঠেছেন মেসি। ছোট থেকেই শান্ত ও লাজুক মেসির একটাই শখ আর নেশা, সেটা হলো ফুটবল।
ফুটবল পেলে সবকিছু ভুলে যেতেন তিনি। যে কারো কাছে ফুটবল উপহার চাইতে বিন্দুমাত্র লজ্জা পেতেন না মেসি। ছোটবেলাতেই অনেকগুলো ফুটবল জমা করে ফেলেন তিনি। ক্রিসমাস হোক আর জন্মদিন, ফুটবল উপহার চাই মেসির। এভাবেই ফুটবলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাঁর। বেশির ভাগ সময়ই রাস্তায় ফুটবল খেলতেন তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে খেলার পরিধিও বাড়ল তাঁর রাস্তাঘাট, ঝোপের ধারে, পরিত্যক্ত জায়গা কোনোখানেই থামতেন না মেসি। সবখানেই ফুটবলটা চাই তাঁর।
প্রথম দিকে অবশ্য বড়দের সঙ্গে খেলার অনুমতি পেতেন না মেসি। রোগা পাতলা ছিলেন বলে কেউই তাঁকে খেলায় নিত না। আরেকটু বড় হলে স্থানীয় ফুটবল ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে যোগ দেন মেসি। মেসির বাবা জর্জ মেসি সেই ক্লাবেরই একজন কোচ ছিলেন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজে যোগ দেন। পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়েছিল ওল্ড বয়েজ।
১১ বছর বয়সে অমিত প্রতিভাবান এই ফুটবলারের গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে ৯০০ মার্কিন ডলার দরকার ছিল। এই বিশাল অর্থের সংকুলান করতে পারছিলেন না মেসির বাবা। বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁর চিকিৎসার ভার নেন। এরপরই মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে বার্সেলোনার যুব একাডেমি লা মাসিয়ায় ভর্তি হন মেসি।
২০০০ সাল থেকে পরের তিন বছর বার্সেলোনার যুব একাডেমি দলে খেলেন মেসি। এই সময় ৩০ খেলায় ৩৭ গোল করেন। ২০০৩ সালে ১৪ খেলায় ২১টি গোল করে মেসি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। পরের বছরই লা লিগায় অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ম্যাচে মাত্র সাত মিনিট খেলেন তিনি। প্রথম গোলের জন্য নবম ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। ২০০৫ সালের আলবাকেতে বালোম্পাইয়ের বিপক্ষে প্রথম গোল করেন মেসি। এর পরেরটা তো সবারই জানা।
২২ বছর বয়সেই প্রথমবার ফিফা ব্যালন ডি অর ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন মেসি। ২৪ বছর বয়সে সিজার আলভোরো রদ্রিগেজকে ছাড়িয়ে বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হন। ২০১৬ সালে মেসি সব মিলিয়ে ৫০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন। সে বছর লা লিগায় সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাবও ছিনিয়ে নেন তিনি। একমাত্র খেলোয়াড় মেসি টানা চারটি ব্যালন ডি অর পুরস্কার জিতেছেন। এখন পর্যন্ত বার্সেলোনাকে আটটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে, পাঁচটি স্পেনিশ সুপার কোপা, চারবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেয়েছিন তিনি। এ ছাড়া মেসি জাদুতে দুবার উয়েফা সুপার কাপ এবং দুইটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে দলটি। চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ চারটি হ্যাটট্রিকের রেকর্ডও মেসির দখলে।