সেই সুকুরই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন!

১৯৯৫ সালের জুলাই, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তুরস্কের ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হাকান সুকুরের পাশে নামী দুজন ব্যক্তি। এক পাশে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ান, অন্যপাশে রাজনীতিবিদ ফেতুল্লা গুলেন। সুকুরের যে বিয়ের অনুষ্ঠানটি জমকালো ছিল, কিন্তু তাঁর জীবনে এর প্রতিফল ঘটেনি। সে জমকালো বিয়ে অবশ্য শেষ পর্যন্ত টেকেনি। বিচ্ছেদের মাধ্যমে ইসরার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ হয়।
সুকুরের সাবেক এই স্ত্রী ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে মারা যান। এরপর তিনি আবারও বিয়ে করেন। এই সংসারে তিন সন্তানও রয়েছে। অনেক ফুটবলারেরই দুর্বিষহ জীবনের উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু কারো জীবন এই সুকুরের জীবনের গল্পের মতো এত গভীরতায় পৌঁছাতে পারেনি।
কোনো সন্দেহ নেই সুকুর একজন কিংবদন্তি। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্লে-অফ ম্যাচে মাত্র ১০.৮ সেকেন্ডে গোল করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গোল করে ইতিহাসে নাম লেখান তুরস্কের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।
খেলা ছেড়ে প্রথমে ফুটবল বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি পা রাখেন রাজনীতিতে। কনজারভেটিভ দল একেপির হয়ে রাজনীতির মাঠে নামেন, যে দল এখন তুরস্কের ক্ষমতায় আছে। এরদোগানের দলের হয়ে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে তাঁর বিয়েতে যাওয়া আরেক রাজনীতিক গুলেন একটি আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু ২০১৩ সালে এরদোগান সরকার গুলেন আন্দোলন চালানো ক্রামার স্কুল বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে সুকুন একেপি থেকে পদত্যাগ করে হয়ে যান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।
এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘আমি আলবেনিয়ান, তুর্কি নই’ বলাটা তাঁর জাতীয়তাবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
২০১৬ সালে সুকুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রেসিডেন্টকে কটাক্ষ করেন। যদিও তিনি বলেন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলতে চাননি কিন্তু তাঁর টুইটে দেখা যায় তিনি পরিষ্কারভাবে এরদোয়ানকে উদ্দেশ করে লিখেছেন।
জুন মাসে সুকুনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। অবশ্য একটি সুযোগ চেয়েছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তাঁকে ফেতুল্লাহ সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য বলে ঘোষণা দেয় সরকার। সুকুন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন যুক্তরাষ্ট্রে।
দেশের বাহিরে খেলতে গেলে দেশকে খুব মনে পড়ত তাঁর। সেই সুকুন এখন স্থায়ীভাবে দেশের বাহিরে। হয়তো আর কখনোই ফিরতে পারবেন না নিজ ভূমিতে। একসময় তাঁর ছবি ঝুলত রাস্তায় রাস্তায়, স্টেডিয়ামে। অথচ আজ তিনি নিজ দেশের কাছেই অপরাধী। ফেরারি হয়ে ঘুরে বেড়াছেন বিদেশের মাটিতে।