অনাথ শিশুদের পাশে টেন্ডুলকার
শচীন টেন্ডুলকারকে একনজর দেখার স্বপ্ন অনেকেরই। কিন্তু সে স্বপ্নপূরণ হয় কজনের? মা-বাবা, পরিবারহীন ছিন্নমূল শিশুদের জন্য সেই স্বপ্নপূরণ তো চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। তেমন অনুভূতিই হয়েছে মুম্বাইয়ের ডন বসকো অনাথ আশ্রমের শিশুদের। মঙ্গলবার দীর্ঘ সময় তাদের সঙ্গে গল্প করেছেন ভারতের ব্যাটিং-কিংবদন্তি। তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিজের অটোগ্রাফ সংবলিত ব্যাট, মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন।
২০১৩ সালের নভেম্বরে ক্রিকেট থেকে অবসরের পর সমাজসেবায় ভালোই সময় কাটছে টেন্ডুলকারের। গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তিনি গিয়েছিলেন মেক-আ-উইশ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনে। সেখানে অনেকটা সময় কাটিয়েছিলেন, সংগঠনটির বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেটও খেলেছিলেন।
এবার ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যানকে কাছে পেয়েছে ডন বস্কো অনাথ আশ্রমের শিশুরা। এই শিশুদের জীবনের গল্প শুনেছেন টেন্ডুলকার, উত্তর দিয়েছেন তাদের সারল্যভরা অনেক প্রশ্নের। তেমনই এক প্রশ্ন ছিল, ‘এত ভালো খেলার পরও আপনি অবসর নিলেন কেন?’ জবাবে মিষ্টি হাসি দিয়ে টেন্ডুলকার বললেন, ‘আমার মনে হয়েছিল অবসর নেওয়ার সেটাই সঠিক সময়। আমার ক্রিকেট-জীবনের সূচনা মুম্বাইয়ে। সমাপ্তিও একই জায়গায় হয়েছে। আমার মনে হয়েছিল নিজের শহরে ক্যারিয়ারের চক্র পূর্ণ করতে পারলেই ভালো হবে। সবাই আমাকে যেভাবে বিদায় দিয়েছিল, তা সত্যিই ছিল বিশেষ কিছু। আমার কোনো অপূর্ণতা ছিল না। মনে হয়েছিল এভাবে ক্যারিয়ার শেষ করলেই তা নিখুঁত হবে।’
আরেক শিশুর প্রশ্ন ছিল, ‘ক্রিকেটার না হলে আপনি কী হতেন?’ টেন্ডুলকারকে ক্রিকেটার ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকায় কল্পনা করাই কঠিন। ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ড নিজের করে নেওয়া এই জীবন্ত কিংবদন্তি অবশ্য অন্য একটি খেলার প্রতি ভালোবাসার কথাও জানালেন, ‘ক্রিকেটার না হলে আমি সম্ভবত টেনিস খেলোয়াড় হতাম।’
ডন বস্কো অনাথ আশ্রমের পাঁচজন শিশুর হাতে টেন্ডুলকার তুলে দিয়েছেন অটোগ্রাফ সংবলিত ব্যাট। তাঁর কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে শিশুরা একেবারে আনন্দে আত্মহারা। তাদেরই একজন নারায়ণ দেবদত্ত জানিয়েছে, ‘আমার মা-বাবা আমাকে অনেক নির্যাতন করত, কঠিন-কঠিন সব কাজ করাত। পড়াশোনা করতে দিত না। ২০১১ সালে আমি পালিয়ে মুম্বাই চলে আসি। বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে এখানে এসেছি। পাঁচ মাস ধরে ডন বস্কো আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আমি টেন্ডুলকারকে টেলিভিশনে দেখেছি। কিন্তু তাঁকে সামনা-সামনি দেখার অনুভূতি অবিশ্বাস্য।’