সাক্ষাৎকার
আস্থার প্রতিদান দিতে চাই : মারুফুল হক
নেদারল্যান্ডসের লোডভিক ডি ক্রুইফকে বিদায় জানিয়ে হঠাৎ করেই জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ইতালিয়ান ফাবিও লোপেজকে। কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে মাত্র দুই মাস পর তাঁকেও বিদায় করে স্বদেশের কোচের ওপরে আস্থা রেখেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশের একমাত্র কোচ হিসেবে উয়েফার ‘এ’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স করে আসা মারুফুল হকের হাতে এখন জাতীয় দলের দায়িত্ব। মারুফুলের প্রথম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ আগামী ২৩ ডিসেম্বর থেকে ভারতের কেরালায় শুরু হতে যাওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবল আসরে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার লক্ষ্যে এখন বিকেএসপিতে ‘শিষ্য’দের নিয়ে নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত তিনি। ব্যস্ততার মধ্যেই কিছুটা সময় বের করে কথা বললেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: ফাবিও লোপেজ আউট, মারুফুল হক ইন। বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
মারুফুল হক : এটা ফুটবল প্রক্রিয়ার একটা অংশ। একজন কোচ যাবেন, আরেকজন আসবেন। আমি বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছি। এটা মেনে নিয়েই প্রত্যেককে কাজ করতে হবে। কে এলো, কে গেল তা নিয়ে না ভেবে আমাদের এখন কাজ করতে হবে পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে।
প্রশ্ন : হঠাৎ করেই জাতীয় দলে ডাক পেলেন। এটা কি প্রত্যাশা করেছিলেন?
মারুফুল : সত্যি কথা বলতে কি আমি মোটেও ভাবিনি হঠাৎ করে এই দায়িত্বটা পাব। এটা আমার জন্য সারপ্রাইজিং। অবশ্য বহুবারই জল্পনা-কল্পনা হয়েছিল যে আমাকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ২০১০ সাল থেকে এমন আলোচনা বহুবার শুনেছি। এবার অনেকটা হঠাৎ করেই দায়িত্বটা পেয়েছি। এখন কাজ হচ্ছে দলকে সাফল্য এনে দেওয়া।
প্রশ্ন : হঠাৎ করে পাওয়া দায়িত্বটাকে কীভাবে দেখছেন?
মারুফুল : আসলে এমন সময়ে আমি দায়িত্বটা পেয়েছি যে কেমন লাগছে বা কেমন ফিল করছি তা ভাবার সময় হাতে নেই। কারণ আমার হাতে এখন অনেক কাজ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হবে ২৩ ডিসেম্বর থেকে। এত অল্প সময়ে একটা দলকে তৈরি করা ভীষণ কঠিন।
প্রশ্ন : সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোচিং কোর্স করেছেন আপনি। উয়েফার ‘এ’ লাইসেন্স পেয়েছেন কিছুদিন আগে। আর এরপরই জাতীয় দলের দায়িত্ব পেলেন। ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখছেন?
মারুফুল : একজন কোচের সব ধরনের কোচিং কোর্স করা প্রয়োজন। এটা তাঁর ক্যারিয়ারের যে কোনো পর্যায়ে কাজে আসতে পারে। তবে উয়েফার ‘এ’ লাইসেন্স কোর্স করার পর আমার মনে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। তবে এত তাড়াতাড়ি যে দায়িত্বটা পাব, তা ভাবিনি।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের দায়িত্বকে কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?
মারুফুল : আসলে প্রতিটি দায়িত্বই চ্যালেঞ্জিং। জাতীয় দলের দায়িত্ব তো অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। কারণ পুরো দেশের মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, আমি কী করছি বা দেশকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পারছি তার খতিয়ান নেবে। এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। ফুটবল ফেডারেশন আমার ওপরে আস্থা রেখেছে। সেই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। অবশ্য হাতে সময় কম। সাফের আগে মাত্র তিন সপ্তাহ সময় হাতে আছে।
প্রশ্ন : বিদেশি কোচ বিদায় করে অনেকদিন পর হলেও স্বদেশের কোচের ওপর আস্থা রেখেছে বাফুফে। আপনার কাছে এটা কেমন মনে হচ্ছে?
মারুফুল : এটা অবশ্যই ভালো ব্যাপার। দেশে অনেক প্রতিভাবান কোচ আছেন। অনেকে কোচিং পেশায় আসতে চাচ্ছেন। জাতীয় দলের দায়িত্বে স্বদেশি কোচ থাকলে অনেকে এই পেশায় আসতে উৎসাহী হবেন। দেশের কোচদের প্রমোট করা না হলে, তাঁদের মর্যাদা না দিলে এই পেশায় আসতে অনেকেই আগ্রহী হবেন না। একজন কোচ ক্লাব পর্যায়ে যতই সাফল্য পান না কেন, জাতীয় দলের কোচিং করানোর সুযোগ না পেলে তাঁর মনে একটা অপূর্ণতা থেকেই যায়। আমি তো মনে করি দেশের কোচদের ওপরে আস্থা রাখা উচিত।
প্রশ্ন : অনেক আশা নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ঠিক আগে আপনার হাতে জাতীয় দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে বাফুফে। কী মনে হচ্ছে, সাফল্য পাওয়া সম্ভব?
মারুফুল : সাফের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত দুটি সাফের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিলাম আমরা। এবার সে ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা হোক তা চাই না।