ফুটবল মাঠের বিখ্যাত ৫ ভ্রাতৃদ্বয়
নানা সময়ে বেশকিছু সহোদর জুটি এসেছে ফুটবলে। কখনও তারা খেলেছেন একই ক্লাবের হয়ে, কিংবা একই দেশের হয়ে। আবার কখনও খেলেছেন একে অন্যের প্রতিপক্ষ হিসেবে। সাফল্যের দিক দিয়ে এক ভাই হয়তো ছাড়িয়ে গেছেন অন্যজনকে, আবার কখনও একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে ছুঁয়ে দেখেছেন সাফল্যের শিখর। এই লেখা সাজানো হয়েছে এমনই ফুটবলীয় ভাইদের গল্প নিয়ে।
রোনাল্ড কোম্যান এবং আরউইন কোম্যান :
নেদারল্যান্ডস ফুটবলে দুই পরিচিত নাম রোনাল্ড কোম্যান ও আরউইন কোম্যান। ছোট ভাই রোনাল্ড কোম্যান সাফল্যের দিকে দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন বড়ভাই আরউইনের চেয়ে। একদিকে ইউরোপের নামি-দামি সব ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন রোনাল্ড, অন্যদিকে ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে নেদারল্যান্ডেসই ছিলেন আরউইন। যদিও ১৯৯৮ সালে ইউরোজয়ী নেদারল্যান্ডস দলের হয়ে একসঙ্গে খেলেছেন দু’ভাই। বাবা মার্টিন কোম্যানও ছিলেন ফুটবলার, ডিফেন্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন খেলেছেন ডাচ লিগে। শুধু তাই নয় জাতীয় দলের জার্সিতেও খেলেছেন একটি ম্যাচ।
ইয়ায়া তৌরে ও কোলে তৌরে:
আফ্রিকান ফুটবলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাইয়ের খেতাব দেওয়ার কথা আসলে ইয়ায়া তৌরে এবং কোলো তৌর নাম সবার আগে উঠে আসবে। নিজেদের সময়ে দুজনই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইউরোপীয় ফুটবলে। একসঙ্গে খেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতেও। সাফল্যের দিক দিয়েও এই দুই ভাই অন্য যে কারো থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তবে ছোট ভাই ইয়ায়া বড়ভাই কোলো থেকে খানিকটা এগিয়ে থাকবেন। ৪ বার বর্ষসেরা আফ্রিকান ফুটবলারের খেতাব ছাড়াও বার্সেলোনা এবং ম্যানসিটির জার্সিতে ৫টি লিগ শিরোপাও জিতেছেন তিনি। অন্যদিকে কোলোও কম যাননি। আর্সেন ওয়েঙ্গারের সেই বিখ্যাত ইনভিন্সিবলের অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে সিটিজেনদের হয়ে জিতেছেন লিগ শিরোপাও। ২০১৫ সালে এই দুই ভাই মিলে আইভরি কোস্টকে এনে দিয়েছিলেন আফ্রিকান নেশন্স কাপের শিরোপা।
থরগান হ্যাজার্ড ও এইডেন হ্যাজার্ড:
অন্য যে কোনো ভাইদের থেকে ইডেন হ্যাজার্ড ও থরগান হ্যাজার্ড এর গল্পটা বেশ আলাদা। এই দুই ভাইয়ের গল্পের শুরুটা বাবা-মার হাত ধরে। মা ক্যারিন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেন বেলজিয়ামের মেয়েদের ফুটবলের প্রথম বিভাগে। অন্যদিকে বাবা থিয়েরি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে বেলজিয়ান দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব লা লুভিয়েরের হয়ে। আর তাই ৪ সন্তানের সবাইকেই ফুটবলার বানিয়েছেন থিয়েরি-ক্যারিন দম্পতি। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে এইডেন হ্যাজার্ড খেলছেন রিয়াল মাদ্রিদে। আর থরগান মাঠ মাতাচ্ছেন বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে। এ ছাড়াও ছোট দুই ভাই কিলিয়ান ও ইথানও এখন পেশাদার লিগগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ফিল নেভিল ও গ্যারি নেভিল
ম্যানচেস্টার একাডেমি থেকে উঠে আসা নেভিল ভ্রাতৃদ্বয় ছিলেন ক্লাস অফ ৯২ এর অন্যতম সদস্য। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের আমলে এই দুই ভাই রেড ডেভিলদের গুরুত্বর্পূণ অংশ ছিলেন। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে দু’ভাইয়ের সাফল্যও কম নয়। দু’জন মিলে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন ৮টি, ৩টি এফএ কাপ এবং ২টি লিগ ক্লাবও জিতেছেন। এ ছাড়াও একবার চ্যাম্পিয়ন লিগ জয়ের স্বাদও নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়জুড়ে গ্যারি ম্যানইউতে থাকলেও ফিল তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন এভারটনে।
জেরোম বোয়াটেং ও কেভিন বোয়াটেং :
ফুটবলের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রাতৃদ্বয়ের কথা আসলেই জেরোম বোয়াটেং-কেভিন বোয়াটেংয়ের কথা উঠে আসে। বোয়াটেং ভ্রাতৃদ্বয়ের একজন খেলেছেন জার্মানির জার্সিতে আরেকজন ঘানার জার্সিতে। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে একে খেলেছেন অন্যের বিপক্ষে। জেরোম বোয়াটেং জার্মানির হয়ে আর কেভিন বোয়াটেং ঘানার হয়ে। যদিও সেই ম্যাচে ৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি কেভিনের ঘানার কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। ন্যাশনাল টিমের মতো ফুটবল মাঠেও দুইভাই ভিন্ন পজিশনে খেলেছেন। কেভিন যেখানে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন, সেখানে জেরোম খেলেছেন সেন্টার ব্যাক হিসেবে। অবশ্য সাফল্যের দিক দিয়ে কেভিনের থেকে অনেকটাই এগিয়ে জেরোম। জার্মানির জার্সিতে ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি বায়ার্নের জার্সিতে ১টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ১টি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, উইয়েফা সুপার কাপ ছাড়াও ৭টি বুন্দেসলিগা শিরোপা আছে তার নামের পাশে। অন্যদিকে কেভিন বোয়াটেং এসি মিলানের জার্সিতে ১টি সিরি আ ও বার্সার জার্সিতে ১টি লা লিগা শিরোপা জিতেছেন।