শান্তর মতো এমন কাউকেই খুঁজছিল বাংলাদেশ
‘তারে খুঁজি, খুঁজে ফিরি বহুদিন, নাগাল পেতে পেতেও পাওয়া হয়নি এতদিন!’
দেশের ক্রিকেটে শুরু হয়েছে নতুন এক অধ্যায়। যে অধ্যায়ের নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটারের কাঁধে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব। পাকাপোক্তভাবে অধিনায়ক হওয়ার আগে শান্ত ছিলেন খণ্ডকালীন দলনেতার ভূমিকায়। যে ভূমিকায় লেটার মার্ক পেয়ে পাস করেছেন তিনি।
বাংলার ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে একযোগে নির্বাচক, কোচ, খেলোয়াড়, দর্শক, সাংবাদিক—সবার মন জয় করা এভারেস্ট জয়ের চেয়ে বোধহয় বেশি কঠিন। শান্ত সেই কঠিন কাজটি করেছেন। যতবার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নিজেকে নিয়ে বড়াই করেন না তিনি, লড়াই করেন সবাইকে নিয়ে।
অধিনায়ক হয়ে ওঠার আগে শান্তকে হয়ে উঠতে হতো সবার আস্থাভাজন। নেতা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়, কিন্তু আস্থা অর্জন করাটা ভীষণ জরুরি। এই জায়গাতে শান্ত আবারও সফল। তার অধীনে বাংলাদেশ তিন ফরম্যাটেই হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। অধরা জয় ছিনিয়ে এনেছে তাদের মাটি থেকেও, যা এত কালেও করে দেখাতে পারেননি আর কেউ।
শান্তর প্রতি তরুণরা আস্থাশীল। দলকে উজ্জীবিত করতে জানেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান সিরিজে চোখ বোলানো যাক। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে চমৎকার জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। অথচ, ম্যাচের পর ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে কিংবা সংবাদ সম্মেলনে নিজের ঢোল পেটাননি একবারও। চূড়ান্ত নম্রতার সঙ্গে বলেছেন, ‘আমি ব্যাটার। আমার কাজ রান করা। সেটি করতে পারলে খুব ভালো লাগে।’
এটুকুতেই নিজের পর্ব সারলেন। এরপর দলীয় পারফরম্যান্স, নাম ধরে ধরে শরিফুল ইসলাম-রিশাদ হোসেনদের স্তুতি গাওয়া, তাদের উৎসাহ দেওয়া— অধিনায়ক তো এমনই হওয়া চাই। বারবার বলেছেন, ‘আমার মনে হয় আমরা খুব ভালো খেলেছি। প্রথম ম্যাচে দুর্ভাগ্যবশত জিততে পারিনি। তবে, দুটি ম্যাচেই আমরা টিম হিসেবে খেলতে পেরেছি। যেভাবে চেয়েছি সেভাবে হয়েছে। জিততে পেরে খুব খুশি।’
শরিফুল নিজেও ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘শান্ত ভাই ছক্কা দিয়ে শেষ করুক, তা সবাই চাচ্ছিলাম। উনি দলকে উজ্জীবিত করতে জানেন। আমরা দল হয়ে খেলতে পারলে সিরিজটাও জিততে পারব।’ এই যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়, এই তো হওয়া উচিত তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশ দল ক্রিকেটের সবুজ বাগিচায় অনেকদিন ধরেই বেড়ে ওঠা গাছ। বৃক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। শক্তি-সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও আমরা পারব, মানসিকতার চর্চা বহুদিন হয়নি। শান্তর হাত ধরে তারুণ্যের এগিয়ে চলার যে নতুন উদ্যম, তাতে বলা চলে সফল হতেই এসেছেন। নিজের কাঁধে দেশের ভার বইতে প্রস্তুত নতুন দলনেতা। এমন একজনকেই বোধহয় এতদিন ধরে খুঁজছিল বাংলাদেশ।