বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
সিরিজের শুরুটা হয়েছিল চরম দুঃস্বপ্নের মতো! প্রথম ম্যাচে অচেনা যুক্তরাষ্ট্রের সামনে স্রেফ উড়ে যায় বাংলাদেশ। তাই, দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ বাঁচানোর জন্য জিততেই হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু,নাহ এবারও পারল না বাংলাদেশ। ব্যাটারদের দৈন্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে করল অসহায় আত্মসমর্পণ। বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ল স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রথম আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ল মোনাক প্যাটেলের দল।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল যুক্তরাষ্ট্র। শেষ ম্যাচে আগামী ২৫ মে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর জন্য মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অচেনা পরিবেশে বৈশ্বিক লড়াই। তাই কন্ডিশন ও বাড়তি প্রস্তুতির জন্যই স্বাগতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন। আরও স্পষ্ট করে বললে—যে সিরিজটা হওয়ার কথা স্রেফ নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার। কিন্তু সেই সিরিজই কিনা অচেনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল বাংলাদেশের।
মাত্র ১৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সৌম্য সরকার বিদায় নেন। রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি। পরের ধাক্কা খায় ১৯ রান করা তানজিদ তামিমকে হারিয়ে। জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পর প্রতিরোধ গড়েন শান্ত ও তাওহিদ। কিন্তু এই জুটি ভাঙে রানআউটের ভুল বুঝাবুঝিতে। ৩৪ বলে ৩৬ রান করে রান আউটের কাটায় বিদায় নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এরপর তাওহিদ ২৫ রানে ফিরলে উইকেটে লড়াই করেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু ১৮তম ওভারে সাকিব ৩০ রান করে আউট হলেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা। সাকিবের বিদায়ের পর জয়ের জন্য মাত্র ২১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এই ছোট্ট সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। হারের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজের দল।
এর আগে টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রিয়ারে স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৪৪ রান তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিন টস জিতে বোলিং বেছে নেন অধিনায়ক শান্ত। কিন্তু, আগে বোলিং করার সুবিধাটা খুব একটা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার স্টিভেন টেইলর ও মোনাক প্যাটেল। সাকিব-মুস্তাফিজদের ছক্কা হাঁকিয়ে বড় কিছুর আভাস দিয়েছিলেন টেইলর। অবশেষে জমে যাওয়া টেইলরকে থামান রিশাদ হাসান।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে এসে জোড়া উইকেট তুলে নেন রিশাদ। বাংলাদেশি লেগ স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন স্টিভেন টেইলর। বাঁহাতি ওপেনার ২৮ বলে ৩১ রান করেন। যা সাজানো ৩ চার ও ২ ছক্কায়।
পরের বলেই বিদায় নেন ওয়ানডাউনে নামা অ্যান্ড্রিস গিউস। রিশাদের ঘূর্ণিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৪৪ রানে জোড়া ধাক্কা খেয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে অবস্থায় যায় স্বাগতিকরা।
কিন্তু,তৃতীয় জুটিতেই কাটিয়ে ওঠে সেই ধাক্কা। অ্যারন জোন্সকে নিয়ে আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন প্যাটেল। এই জুটিতে চড়ে ১৫তম ওভারে দলীয় শতরান পার করে যুক্তরাষ্ট্র। শরিফুল-মুস্তাফিজদের পরীক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেন তারা। দুজন মিলে লড়াই করেন ১৬ ওভার পর্যন্ত। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে এই জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। জোন্সকে আউট করে ভাঙেন জমে যাওয়া জুটি। ৩৪ বলে ৩৫ করে সাজঘরে যান জোন্স, তার বিদায়ে ভাঙে ৫৬ বলে গড়া ৬০ রানের জুটি। উইকেটে এসে টিকতে পারেননি কোরে অ্যান্ডারসনও। এমনকি আগের ম্যাচের নায়ক হারমিত সিংও আজ পারেননি জ্বলে উঠতে। রানের খাতা খোলার আগেই তাকে মাঠছাড়া করেন মুস্তাফিজ।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকে ছিলেন প্যাটেল। যদিও রানের গতি ছিল তার মন্থর। তবে, তার ব্যাটে চড়েই এই পুঁজি পায় স্বাগতিকরা।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ২১ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেনে রিশাদ হাসান। ২৯ রান দিয়ে শরিফুল ইসলামের শিকারও দুটি। ৩১ রান খরচায় মুস্তাফিজও নেন দুই উইকেট।