শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংসতার বিচার চাইলেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল সারা দেশ। শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ, অবিভাবক ও বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। এই তালিকায় এবার যোগ হয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরাও। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর নৃশংসতার বিচার চাইলেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে মাঠের তারকাদেরও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন সাংবাদিকরা।
আজ শনিবার (৩ জুলাই) মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের সামনে ‘শিক্ষার্থী-জনতার ওপর নৃশংসতার বিচার’ চেয়ে মানববন্ধন করেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। একটি সুস্থ দেশে বাস করা ও স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবিও জোরদার করেছেন সাংবাদিকরা। মানবন্ধনে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য গণমাধ্যমের ক্রীড়া সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সিনিয়র সাংবাদিক এমএম কায়সার বলেছেন, ‘আমি একটা ছোট্ট গল্প বলতে চাই। আমার ছেলে ইন্টার মিডিয়েটে পড়ে। সে আমাকে কাল প্রশ্ন করছে, বাবা কেরানিগঞ্জ কারাগার কোথায়? জিজ্ঞাস করলাম কেন? বলল, আমার পেছনে বসে যে ছেলেটা পরীক্ষা দিচ্ছে সে কারাগারে।’ এই কথাটা একটু ভাবুন। এই কথাটির মর্ম অনেক। এভাবে চলতে দিতে পারা যায় না। প্রশাসনে যারা আছেন তারা এই ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দিন। আর যেন কোনো শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে না হয়। সেই ব্যবস্থা করুন। প্রতিটা হত্যার সঠিক বিচার করুন।’
কালের কন্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক এটিএম সাইদুজ্জামান বলেছেন, ‘গত কিছুদিনে, জুলাই মাসে যা ঘটেছে এবং এখন যা ঘটছে, তাতে শোক জানানোর কোন ভাষা নেই। শুধু একজন ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে নই, আমি এখানে একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এসেছি। আমি মর্মাহত, শোকাহত।’ বিচারের দাবি তোলার আহ্বান আরও বলেন, ‘আমাদের আরও আগে ভয়েজ রেইজ করা দরকার ছিল। এই নৃশংসতা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে আছেন, তাঁরা সেটি করেননি। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, তার রেশ আমাদের আরও কতো বছর বহন করতে হবে, আমি নিশ্চিত নই। আমার দাবি প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, কোনো আই ওয়াশ নয়।’
ক্রীড়া সাংবাদিক মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশের স্বপ্ন কেউ দেখেনি। এই বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দেননি। আমরা কেউ এখন নিরাপদ না। কেউ পড়ার টেবিলে বসেছে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। একটি শিশু বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকেও বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। এটার নামই কি বাংলাদেশ? আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা মাঠে নেমেছি, আমাদের ভাইদের প্রাণ ঝরে যাওয়ায়। আমরা এর বিচার চাই।’
নারী সাংবাদিক হিমু আক্তার বলেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে যা ঘটে গিয়েছে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এসব মেনে নেওয়া অসম্ভব। আজ মাঠে নেমেছি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে। আমাদের ভাই-বোনদের হত্যার বিচার চাইতে। এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। কেন আমাদের ছোট-ভাইবোনদের ওপর গুলি করা হবে? সাইদ-মুগ্ধ-রিয়াদের কেন আমাদের হারাতে হলো? এর বিচার আমরা চাই। আমরা কোনো পক্ষ-বিপক্ষ না, আমরা শুধু চাই আর যেন একটি প্রাণও না ঝরুক। তাছাড়া ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের কথাও বলতে চাই। দেশের লাখ লাখ তরুণ ক্রিকেট পছন্দ করেন। দেশ-বিদেশের যে কোনো মাঠে গিয়ে আপনাদের জন্য গলা ফাটায়। কিন্তু তরুণ শিক্ষার্থীদের এই কঠিন সময়ে অন্তত একটু সাপোর্ট আপনারও দিতে পারতেন। এই বিষয়টি তারকা হিসেবে আপনাদের জন্যও লজ্জাজনক।’
সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক রিয়াসাদ আজিম বলেছেন, ‘আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে বলছি না। আমি বলব এত প্রাণ ঝরার কথা। একটা ছোট শিশু কিন্তু কোটা আন্দোলন বুঝে না, তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। পৃথিবীর আলো ঠিকঠাক দেখার আগেই তাকে প্রাণ দিচ্ছে। এটা তো হতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশের জীবনের এত আতঙ্ক কেন থাকবে? এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই আমরা। আজকে আমরা সাধারণ মানুষ মাঠে নেমেছি। কিন্তু যারা মহাতারকা তাদের কাছে আমরা অন্তত একটা স্ট্যাটাস আশা করেছিলাম। যদি সেই তারকারা দিতে ব্যর্থ হয় তাকে বর্জন করুন। সেই তারকাদের বর্জন করুন।’