নারী না কি পুরুষ, বিতর্ক ঠেলে খেলিফের স্বপ্নজয়
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ বলা হয় অলিম্পিককে। এই মহাযজ্ঞ এলে যেমন পদকের লড়াই চলে তুমুল তেমনি বিতর্কও সৃষ্টি হয়। অ্যাথলেটদের নানা ইতিহাস টপকে বিতর্কিত হন অনেকে। এবারও নানা ঘটনার সাক্ষী হয়েছে প্যারিস অলিম্পিক।
যার মধ্যে একটি ঘটনা হলো লিঙ্গ নির্ধারণের জটিলতা নিয়ে বিতর্ক। আলজেরিয়ান বক্সার ইমানে খেলিফ এবং তাইওয়ানের লিন ইয়ু–তিং—পুরুষ নাকি নারী এ নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। তবে, সব বিতর্ক পাশ কাটিয়ে স্বর্ণ জয় জিতলেন খেলিফ।
গতকাল শুক্রবার রাতে রোলা গাঁরোয় মেয়েদের বক্সিংয়ে ৬৬ কেজির ফাইনালে চীনের ইয়াং লিউকে হারিয়ে সোনার পদক জিতেছেন খেলিফ।
অথচ এই অলিম্পিকে যোগ দেওয়ার পর তার জীবনে বয়ে যায় নানা তুফান। বক্সিং রিংয়ে নামার পরপরই খেলিফকে ছেলে না মেয়ে, এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। খেলিফের শক্তির কাছে টিকতে না পেরে প্রথম ম্যাচেই হার মেনে নেনে ইতালির অ্যাঞ্জেলা কারিনি। সেই ম্যাচ থেকেই মূলত বিতর্ক শুরু। এর পরের গল্প সবার জানা। লিঙ্গ নিয়ে রীতিমতো তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে।
তবে সব জটিলতা কাটিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে সফল খেলিফ। নিজের চেষ্টায় দৃঢ় থেকে দেশকে সোনা এনে দিতে পেরেছেন এই অ্যাথলেট। সোনার লড়াইয়ে ইয়াং লিউকে ৫–০ ব্যবধানে হারিয়ে সব সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন খেলিফ।
অবশ্য অনেকের কাছে বিতর্কিত হওয়া খেলিফ আবার সমর্থনও পেয়েছিলেন। যেমন—কাল রোলা গাঁরোতেও তার সমর্থনে গলা ফাঁটিয়েছেন অনেকে।
ভিন্নমুখী দুই পরিস্থিতির মধ্যে সফল হয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে খেলিফ বলেছেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আট বছর ধরে আমি এই স্বপ্ন দেখে আসছিলাম এবং এই মুহূর্তে আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। একজন সোনাজয়ী। আমি আট বছর ধরে অনেক কষ্ট করেছি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আর এখন তার ফল হিসেবে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হলাম।’ যারা আমাকে সমর্থন দিতে এসেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আলজেরিয়ার সব মানুষকে ধন্যবাদ। আমার দল ও কোচদেরও ধন্যবাদ।’
লিঙ্গ নির্ধারণের জটিলতা এবং জেনেটিক্সের প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, লিঙ্গ নির্ধারণে ক্রোমোসোমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক বৈচিত্র্যের কারণে সুনির্দিষ্টভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যাদের লিঙ্গ বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু বৈচিত্র্য রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে Y ক্রোমোসোম থাকা মানেই যে তারা পুরুষ, এটি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা যায় না।
খেলিফ এবং লিনের বক্সিংয়ে অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা বিষয়টি হলো, তারা কি XY ক্রোমোসোম বহন করছে নাকি তাদের টেস্টোস্টেরন মাত্রা বেশি? এর কোনো উত্তরই জানা যায়নি। কারণ, খেলিফ ও লিনের লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ)।