নেপালকে হারিয়ে ফের সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
পুরো ম্যাচে বামপ্রান্ত দিয়ে নেপালের রক্ষণভাগকে নাচিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ম্যাচের বয়স যখন ৮২ মিনিট, নেপাল তখনও ভাবতে পারেনি কী ঘটতে যাচ্ছে। বাঁপ্রান্ত দিয়ে দুরন্ত এক শট, নেপালের গোলরক্ষক আনজিলা প্রাণপণ লাফ দিয়ে চেষ্টা করেছেন বাঁচানোর। কিন্তু, সেটি পারেননি। ঋতুর মাপা ক্রস খুঁজে নেয় জালের ঠিকানা। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে রয় জয়সূচক গোল।
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) নেপালকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সাফের শিরোপা ধরে রাখল বাংলার নারীরা। টানা দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের কাছে হেরে সাফ জয়ের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল নেপালের। সবমিলিয়ে, নেপাল হারল টানা তৃতীয় সাফের ফাইনালে।
কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম ভরপুর ছিল স্বাগতিক দর্শকে। নেপালের ভক্তরা গোটা সময়জুড়ে মাতিয়ে রাখেন স্টেডিয়াম। চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের অবশ্য সেদিকে নজর নেই। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর পিটার বাটলারের শিষ্যরা নিজেদের আরও গুছিয়ে নেয়। একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত রাখে নেপালকে। ম্যাচের প্রথম গোলটিও পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ৫২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের পায়ে শুরু আক্রমণ। সেখান থেকে বল পান তহুরা। ডি বক্সের ভেতর সেটি ক্লিয়ার করতে গিয়ে বাংলাদেশি তারকা মণিকা চাকমার পায়ে বল ঠেলে দেয় নেপাল। গোল করতে ভুল করেননি মণিকা। উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ।
এগিয়ে যাওয়ার পর চ্যাম্পিয়নরা থেমে থাকেনি। পুরো টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসানো নেপালকে উল্টো ব্যস্ত রাখে বাংলাদেশ। তারাও শানায় বেশ কয়েকটি আক্রমণ। ৫৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে নেপালি তারকা প্রীতির পাস খুঁজে নেয় আমিশা কার্কিকে। সেখান থেকে লক্ষ্যভেদ করে নেপালকে সমতায় ফেরান আমিশা। ৬৫ মিনিটে ফের তাদের আক্রমণ। তবে, সাবিতার শট ঠেকিয়ে দেন বাংলার গোলরক্ষক রুপনা চাকমা।
নেপালের টানা আক্রমণের মাঝে সুযোগ পায় বাংলাদেশ। দৃশ্যপটে ঋতু। নেপাল রক্ষণকে ঘোল খাইয়ে ক্রস পাঠান মারিয়া মান্ডার দিকে। মান্ডার দূরপাল্লার শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন আনজিলা। নেপাল অধিনায়ক ও গোলরক্ষক যেন পাখির মতো উড়ে সে যাত্রায় দলকে রক্ষা করেন।
৭৭ মিনিটে আবারও ঋতুর সাজানো আক্রমণ। এবার শামসুন্নাহার জুনিয়রের কাছে বল। তার দুর্বল শট গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন। ৮২ মিনিটে ঋতু দায়িত্ব নিলেন নিজের কাঁধেই। শামসুন্নাহার সিনিয়রের থ্রো থেকে বল পেয়ে একাই টানেন। এরপর শট ও গোল।
শেষের ১০ মিনিটে দুদলই চেষ্টা করেছে গোল করতে। বাংলাদেশ রক্ষণাত্মক খেলেনি। নেপালও শেষ দিকে অলআউট ফুটবল খেলেছে। তাতে লাভ হয়নি। বদলায়নি ভাগ্য। ২০২২ এরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। গতবার ৩-১ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ, এবার ব্যবধান ২-১। পার্থক্য এতটুকুই। শিরোপার হাসি হেসেছে বাংলার মেয়েরাই। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে আবারও পেয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব, উড়িয়েছে লাল-সবুজের পতাকা।